বিএনপি ক্ষমতায় আসলে কৃষককে আত্মহত্যায় প্ররোচনার বিচার হবে
বিএনপি ক্ষমতায় আসলে কৃষক শফিউদ্দিনকে আত্মহত্যায় প্ররোচনাদাতাদের বিচার করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন।
শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় শেরপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. হযরত আলীর মাধবপুরের নিজ বাসভবনে কৃষক দল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিজ্ঞাপন
হাসান জাফির তুহিন বলেন, বাংলাদেশের কোনো শ্রেণিপেশার মানুষই এখন ভালো নেই। বিশেষ করে বেশি খারাপ অবস্থায় আছে কৃষক সমাজ। কারণ তারা ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। অন্যদিকে ডিজেলের দামও বেশি। কিছুদিন আগে কৃষকরা ফসলের দাম না পেয়ে নিজের উৎপাদিত ফসলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। এটি একটি বিরল ঘটনা। সর্বশেষে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মানিকচাঁদ গ্রামে ফাঁসির মঞ্চ বানিয়ে একজন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনাটি সারাদেশ নাড়িয়ে দিয়েছে, আমাদের স্তম্ভিত করেছে।
তিনি বলেন, আমরা সরেজমিনে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মানিকচাঁদ গ্রামের কৃষক শফিউদ্দিনের বাড়ি পরিদর্শন করেছি। শফিউদ্দিন তার জমিতে সেচ পাম্প বসাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত এক জনপ্রতিনিধি তাকে বিচারের মুখোমুখি করেন। তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এ ঘটনায় কৃষক শফিউদ্দিন কষ্টে ফাঁসির মঞ্চ বানিয়ে আত্মহত্যা করেন। শুধু কৃষক নয়, দেশে অভাব-অনটনে অন্যান্য মানুষেরাও আত্মাহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
হাসান জাফির তুহিন বলেন, বিএনপি সবসময় নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের পাশে ছিল। এটি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং সম্পূর্ণ মানবিক কারণে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় আমরা এখানে এসেছি। কৃষক শফিউদ্দিনের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছি, সহমর্মিতা জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম বাবুল, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল বাশার আকন্দ, কৃষক দলের নেতা মজিবর রহমান চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. রিয়াজ উদ্দিন, মো. শামসুর রহমান, আব্দুল্লাহ আল নাইম, মো. মাজহারুল ইসলাম, মো. সাদেকুল ইসলাম, শেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মো. মাহমুদুল হক রুবেল, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. হযরত আলী, জেলা কৃষক দলের সভাপতি আমিনুল ইসলাম আঙুর, সাধারণ সম্পাদক মো. রুহুল আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বিকেলে কৃষক শফিউদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে তার স্বজনদের সমবেদনা জানান নেতৃবৃন্দ। ওই সময় কৃষক শফিউদ্দিনের স্ত্রী আবেদা বেগমের হাতে নগদ ৩০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়। পরে কৃষক শফিউদ্দিনের সেচ পাম্প পরিদর্শন করেন তার কবর জিয়ারত করেন তারা।
কৃষক শফিউদ্দিনের মেয়ে সুমনা খাতুন জানান, জমিতে পানি দেওয়ার জন্য তার বাবা পল্লী বিদ্যুতের কাছে সাব মারসিবল পাম্প বসানোর অনুমতি চান। এরপর অনুমতি না পেয়ে ৭০ হাজার টাকায় তিনি নিজের জমিতে পাম্প বসান। কিছুদিন পর একই গ্রামের আহাম্মদ আলী ওই পাম্প থেকে আধা কিলোমিটার দূরে তার বাড়িতে পাম্প বসানোর জন্য পল্লী বিদ্যুতের অনুমতি নেন। তিনি আমার বাবার ক্ষতি ও পানির ব্যবসা করার জন্য পাশাপাশি পাম্প স্থাপন করেন। আমার বাবার পাম্প অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন।
এরপর বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. মজিবর সালিস ডাকেন। সেখানে আহাম্মদ আলীকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাবাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার জন্য চাপ দেন। একইসঙ্গে আমাদের পাম্প তুলে নিতে বলেন।
সুমনা অভিযোগ করে বলেন, সালিশের দুদিন পরই মজিবর ও আহাম্মদ ক্ষতিপূরণের ২০ হাজার টাকা চেয়ে হুমকি দেন। এরপর গত বুধবার (০২ ফেব্রুয়ারি) আমার বাবা আত্মহত্যা করেন।
প্রসঙ্গত, গত ২ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে নালিতাবাড়ী উপজেলার মানিকচাঁদ গ্রামের কৃষক শফিউদ্দিন সেচ পাম্প নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের চাপে নিজে ফাঁসির মঞ্চ বানিয়ে ফসলের মাঠে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষ আহাম্মদ আলী ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মজিবর রহমানকে আসামি করে নিহতের বড় ছেলে আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে থানায় মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।
জাহিদুল খান সৌরভ/এসপি/আরএআর