কুষ্টিয়ায় অনলাইনে টিকা নিবন্ধনে অনীহা
ফাইল ছবি
সারাদেশের মতো কুষ্টিয়াতে রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে করোনাভাইরাসের টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হবে। সে লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু অনলাইনে টিকা নিবন্ধনের ক্ষেত্রে জনসাধারণের মধ্যে দেখা দিয়েছে অনীহা।
এদিকে, উদ্বোধনের দিন প্রথম করোনা টিকা নেবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহাবুব উল আলম হানিফ। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, প্রথম ধাপে রোববার করোনার সম্মুখযোদ্ধাদের টিকা দেওয়া হবে। দুপুর ১২টায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে সংসদ সদস্য মাহাবুব উল আলম হানিফ আনুষ্ঠানিকভাবে এই টিকা প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। সম্মুখযোদ্ধাদের টিকা প্রদান শেষে সর্বসাধারণের জন্য টিকা উন্মুক্ত করা হবে।
টিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই। অনেকেই সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে কীভাবে নিবন্ধন করতে হবে তা জানেন না। আবার বড় একটি অংশের নেই স্মার্টফোন। আবার কেউ কেউ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ে টিকা নিতে চাচ্ছেন না।
বিজ্ঞাপন
আবার অনেকেই টিকা নিতে আগ্রহী হলেও কোথায় এবং কীভাবে টিকা নিতে হবে-সেটি সম্পর্কে জানেন না। টিকা গ্রহণের জন্য অনলাইনে নাম নিবন্ধন করা নিয়েও পড়েছেন বিড়ম্বনায়। টিকা গ্রহীতা নিবন্ধন না করে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে নাম নিবন্ধনের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন কেউ কেউ।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মোল্লাতেঘরিয়া এলাকার জাহিদ হাসান বলেন, আমি নিবন্ধন করিনি। সবার করোনার টিকা দেওয়া হয়ে গেলে আমি নেব। আগেই আমি নিব না।
করোনার টিকা কবে নিবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ভেড়ামারা উপজেলার পূর্ব ভেড়ামারা এলাকার আমিরুল ইসলাম কনক নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি ভালো আছি। আমি করোনা টিকা দিব না। যখন সমস্যা হবে তখন নেব।
রিকশাচালক জিয়ারুল বলেন, কীভাবে নিবন্ধন করতে হয় জানি না। শুনলাম এখন ডাক্তার, পুলিশ, সাংবাদিক এসব বড় বড় মানুষকে করোনা টিকা দেওয়া হবে। আমাদের পরে দেওয়া হবে। সরকার থেকে যখন আমাদের দেবে তখন নিব। গরিবের আল্লাহ আছে। এখনও আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি।
দৌলতপুর উপজেলার একাধিক ব্যক্তি বলেন, কীভাবে করোনার টিকা নিতে হয় আমরা জানি না। ইন্টারনেটে নিবন্ধন করতে হয় কিভাবে সেটাও জানি। আমাদের মোবাইল ফোনও নেই। এজন্য আমরা টিকা নিবো না। সরকারিভাবে যেদিন করোনার টিকা দিবে সেদিন নিব।
মজমপুর এলাকার মিঠু আহমেদ বলেন, করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সবার টিকা নেওয়া দরকার। তবে অনেকেই জানে না কোথায়, কীভাবে নিবন্ধন করতে হবে। এটি জানতে পারলে অনেকেই আগ্রহ নিয়ে টিকা গ্রহণের জন্য নিবন্ধন করবে। সরকার আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করে টিকা এনেছে। আমরা অবশ্যই টিকা নেব।
কুষ্টিয়ার মঙ্গলবাড়ীয়া এলাকার রাজন আলী বলেন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এলাকায় এলাকায় ঘুরে নামের তালিকা করে করোনার টিকা দেওয়া হোক। তাহলে টিকা নিতে আমাদের এত সমস্যা হবে না। কারণ অনেকেই জানে না কিভাবে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হয়। আবার অনেকের মোবাইল ফোন নেই।
সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, টিকা গ্রহণের জন্য ওয়েবসাইটে নাম নিবন্ধন প্রক্রিয়া খুবই সহজ। সুরক্ষা অ্যাপের ভেতরে গেলেই সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কারা টিকা নিতে পারবেন আর কারা নিতে পারবেন না; এ বিষয়টির সমাধানও সেখানে আছে। আর এ টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে ১৮ বছরের নিচে কাউকে টিকা দেওয়া হবে না। টিকা প্রদানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে অনেকের ভ্রান্ত ধারণা ছিল। তবে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। বিভ্রান্তি দূর করার জন্য আমরা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তথ্য প্রচার করছি।
উল্লেখ্য, ২৯ জানুয়ারি করোনাভাইরাসের ৬০ হাজার ডোজ টিকা পৌঁঁছায় কুষ্টিয়ায়। টিকাগুলো সিভিল সার্জন অফিসের কোল্ড স্টোর রুমে রাখা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও করোনা টিকা পাঠানো হয়েছে। টিকাদানের জন্য জেলা সদরে দুটি ও ছয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুটি করে টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি টিমে দুজন করে টিকা দানকর্মী ও চারজন করে স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন।
রাজু আহমেদ/এসপি