বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় যুবলীগ নেতাসহ আটক ৪
কয়া মহাবিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে স্থাপিত বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও এক যুবলীগ নেতাসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। কুমারখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুজিবর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত থেকে শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) ভোররাতের কোনো এক সময় উপজেলার কয়া মহাবিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে স্থাপিত বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। সকালে বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসে ।
বিজ্ঞাপন
এ ঘটনায় কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সিরাজুল ইসলামকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিবুল ইলামাম ও কুমারখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুজিবর রহমান।
আটকরা হলেন- কয়া মহাবিদ্যায়ের অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ, কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় তাঁতি লীগের সহ-সভাপতি নিজামুল হক চুন্নু, নৈশ প্রহরী খলিলুর রহমান ও কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিসুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন ও পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
কুমারখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে পাঁচ ব্যক্তিকে ভাস্কর্য ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার সময় কয়া মহাবিদ্যালয়ের নাইটগার্ড খলিলুর রহমান দেখতে পান। পরে তিনি বিষয়টি অধ্যক্ষকে জানান। কিন্তু অধ্যক্ষ গুরুত্ব না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। পরদিন বেলা ১১টার দিকে স্থানীয়রা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পান কে বা কারা বাঘা যতীনের মুখের ডান পাশের চোয়াল এবং নাকের পুরোটাই শক্ত কিছু দিয়ে পিটিয়ে ক্ষতবিক্ষত করেছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে বলে ওসি জানান।
এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাতের কোনো এক সময় কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে পৌরসভার উদ্যোগে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের মুখ ও হাতের অংশ ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। পরে অভিযান চালিয়ে ৫ ডিসেম্বর রাতে প্রথমে এক মাদরাসার দুই শিক্ষক এবং পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৬ ডিসেম্বর ভোরে দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে তারা দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে দেশব্যাপী ইসলামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদের মধ্যেই কুষ্টিয়ায় এমন ঘটনা এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ঘটল।
বাঘা যতীন ছিলেন বাংলার প্রধান বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর দলের প্রধান নেতা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে কলকাতায় জার্মান যুবরাজের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে তিনি জার্মানি থেকে অস্ত্র ও রসদের প্রতিশ্রুতি অর্জন করেছিলেন।
১৮৭৯ সালের ৭ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানায় বাঘা তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির কয়াগ্রামে (বর্তমানে কুষ্টিয়া) জন্ম নেয়া এ বিপ্লবীর আসল নাম যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে ১৯১৫ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ভারতে ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সে সময় বাংলার প্রধান বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর দলের নেতা ছিলেন বাঘা যতীন।
আরএআর