গতকাল (শনিবার) বিকেলে ভেড়ামারা উপজেলার ১৬ দাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি কলাবাগান থেকে অগ্নিদগ্ধ এক নারীর বিকৃত মরদেহ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে সজনী (২৫) নামে এক গৃহবধূর স্বামী বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকায় পরোকীয়া প্রেমিকার কাছে যায় এবং তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। 

রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের দিকে সজনী তার বাবাকে ফোন দেন। এর আগে বৃহস্পতিবার থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

অগ্নিদগ্ধ ওই নারীর মরদেহ সজনীর বলে দাবি করেছিলেন তার বাবা সিরাজুল ইসলামসহ তার স্বজনরা। তিনি তার মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার পর পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ তুলে ভেড়ামারা থানায় জামাই লালন আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। ময়নাতদন্তের সময়ও তিনি মর্গে উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ লালনকে আটকও করেছিল। কিন্তু সিরাজুল ইসলামের মেয়ে সজনী মরেনি, পালিয়ে রিয়াজ নামে এক ব্যক্তিকে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। উদ্ধার হওয়া ওই নারীর মরদেহ এখনো অজ্ঞাত। তার পরিচয় মিলেনি। অভিযোগ তুলে নিয়েছে সজনীর বাবা। পরে লালনকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। 

সজনী মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া ইউনিয়নের রানাখড়িয়া গ্রামের গোরস্থানপাড়ার সিরাজুল ইসলামের মেয়ে। সজনীর প্রথম স্বামী লালন আলী ভেড়ামারা উপজেলার ১৬দাগ এলাকার সলিম উদ্দিনের ছেলে।

সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অগ্নিদগ্ধ মরদেহটি সজনীর বলে শনাক্ত করেছিলাম। কিন্তু ওই মরদেহ আমার মেয়ের না। সজনী মরেনি, পালিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। দুপুরের দিকে আমি যখন মর্গে তখন সজনী আমার মোবাইলে কল দিয়ে আমার সাথে কথা বলেছে। ভিডিও কলেও তার সাথে কথা বলেছি। সজনী ভেড়ামারা থেকে পালিয়ে প্রথমে ঢাকায় যায় রিয়াজ নামে এক পুরুষের কাছে। তারপর রিয়াজকে বিয়ে করে সজনী। বর্তমানে সে ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে রিয়াজের বাড়িতে আছে। তাকে কুষ্টিয়ায় ফিরিয়ে আনার জন্য লোকজন পাঠাচ্ছি। 

তিনি আরও জানান, প্রায় ১৩ বছর আগে পারিবারিকভাবে লালন আলীর সাথে সজনীর বিয়ে হয়। সজনীর ৫ বছর বয়সী এক ছেলে ও ৮ বছর বয়সী এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। গত তিনমাস যাবত স্বামী লালন আলী স্ত্রী সজনীকে মোবাইলে অন্য পুরুষের সাথে কথা বলার কারণ দেখিয়ে শারীরিক নির্যাতন করত। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গত এক সপ্তাহ আগে সজনী পালিয়ে বাবার বাড়ি চলে গিয়েছিল। 

গত বুধবার লালন তার শ্বশুর বাড়ি গিয়ে স্ত্রীকে জোর করে তার বাড়িতে নিয়ে আসেন। এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে সজনী নিখোঁজ হয়। পরে শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ভেড়ামারা উপজেলার ১৬দাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি কলাবাগানে অগ্নিদগ্ধ বিকৃত এক নারীর মরদেহ পাওয়া যায়। মরদেহের পায়ে কাটা দাগ দেখে এবং স্বামী লালন সজনীকে মারধর করত বলে সজনীর পরিবার মরদেহটি সজনীর বলে শনাক্ত  করেছিল। তবে সেই মরদেহ সজনীর না। 

ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, শনিবার উদ্ধার হওয়া অগ্নিদগ্ধ ওই নারীর মরদেহের পরিচয় মিলেনি। ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। লালনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সজনীর বাবা তার অভিযোগ তুলে নিয়েছেন। তারা তার মেয়ের খোঁজ পেয়েছেন।

রাজু আহমেদ/আরআই