স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন অন্তঃসত্ত্বা পনোবালা। হাঁটতে হাঁটতে প্রায় দুই মাইল পথ পাড়িও দেন। পথিমধ্যে হঠাৎ প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে তিনি ছুটে যান নদীর পাড়ে। সেখানে একটি সবজি বাগানে সন্তান প্রসব করেন। পরে গ্রামের কয়েকজন তার সেবায় এগিয়ে আসেন। বর্তমানে প্রসূতি মা ও নবজাতক ভালো আছেন।

শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের আমরুলপুর গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটেছে। সন্তান প্রসবের খবর পেয়ে পানোবালার স্বামী হরিশ চন্দ্র অনুতপ্ত হয়ে তার স্ত্রীর মান ভাঙিয়ে ঘরে ফিরিয়ে নিয়েছেন।

আমরুলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম জানান, জমিতে কাজ করার সময় নদীরপাড় ধরে তিনি এক মহিলাকে আসতে দেখেন। দূর থেকে সন্তান সম্ভবা এবং বেশ অসুস্থ দেখাচ্ছিল। হঠাৎ ওই মহিলা চিৎকার করে সবজি বাগানের একটি সীমখেতের মাচার আড়ালে চলে যান। কিছুক্ষণ পর কাছাকাছি গিয়ে তিনি সেখানে নবজাতকের কান্না শুনতে পান।

প্রসবের ঘটনাটি বুঝতে পেরে কৃষক আব্দুল হাকিম পাশের একটি বাড়িতে বিষয়টি জানান। তখন মহসীনা নামে ওই বাড়ির একজন আরও দুজন মহিলাসহ সেখানে ছুটে যান। তিনজনে মিলে প্রসূতি পানোবালাকে সহযোগিতা করেন। মহসীনা বলেন, আমরা দৌড়ে গিয়ে দেখি মহিলাটি মাটিতে শুয়ে আছেন, পাশে ছেলে নবজাতকটি চিৎকার করে কাঁদছিলো। যাবার সময় দোকান থেকে নতুন একটা ব্লেড-সুতাসহ কিছু জিনিস নিয়েছিলাম। সাহস করে শিশুটির নাড়ি কেটে বেঁধে দিয়েছি।

পরে ওই প্রসূতি তার পরিচয় জানালে দুই মাইল দূরে হিন্দুপাড়ায় গিয়ে পানোবালার স্বামী হরিশচন্দ্রকে খুঁজে বের করা হয়। তিনি বিষয়টি জানার পর ছুটে আসেন স্ত্রীর কাছে। অভিমান ভাঙিয়ে নবজাতককে কোলে নিয়ে বাড়ি ফিরেন অনুতপ্ত হরিশ চন্দ্র ও পানোবালা।

এ ব্যাপারে হরিশ চন্দ্র জানান, শনিবার সকালে জমি থেকে আলু তোলার বিষয় নিয়ে তাদের দুইজনের মধ্যে খানিকটা ঝগড়া হয়। পরে কাজের জন্য তিনি জমিতে চলে যান। কিন্তু তার স্ত্রী পানোবালা রাগ করে কখন বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে যায়, তা বুঝতে পারেননি। পরে অন্যের কাছ থেকে সন্তান প্রসবের খবর পেয়ে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে স্ত্রীর এমন কাণ্ড ঘটানোয় তিনি অনুতপ্ত হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। এমন বিপদাপন্ন অবস্থায় তার স্ত্রীকে সাহায্য সেবা করায় তিনি কৃতজ্ঞতাও জানান।

হরিশ-পানোবালার সংসারে আরও দুটি সন্তান রয়েছে। এটি তাদের দ্বিতীয় ছেলে সন্তান। সংসারে প্রায়শই ছোট ছোট বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয় এবং পরে তা মিটেও যান। কিন্তু এবার যা ঘটেছে তাতে হরিশ চন্দ্র নিজেও অবাক বলে জানান।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই