রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষক দেলদার মিয়ার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দীর্ঘ চার বছর পর ওই কৃষককে পিটিয়ে হত্যার অপরাধে তার আপন ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিজ বাবা দেলদার মিয়াকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন ছেলে সোহেল মিয়া ওরফে লেবু মিয়া।

মঙ্গলবার (২২ ফ্রেব্রুয়ারি) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআইর রংপুর জেলা পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পীরগঞ্জের চাপাবাড়ি গ্রামের কৃষক দেলদার মিয়াকে (৬০) অচেতন ও রক্তাক্ত অবস্থায় বিকেলে তার বাড়ির বাঁশঝাড় থেকে উদ্ধার করে মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। কিন্তু সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে মারা যান কৃষক দেলদার মিয়া।

এ ঘটনায় রংপুরে কোতয়ালী থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর একটি মামলা রুজু হয়। পরবর্তীতে লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন কৃষক দেলদার মিয়ার মৃত্যুকে অন্তিম ও নরহত্যা প্রকৃতির উল্লেখ করা হয়। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালী থানা থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পীরগঞ্জ থানায় প্রেরণ করা হয়।

ওই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাটি তদন্ত করে ঘটনার সাথে জড়িতদের সনাক্ত করতে ব্যর্থ হয় পীরগঞ্জ থানা পুলিশ। পরে ২০১৯ সালের ৫ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন সত্য উল্লেখ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। কিন্তু আদালত মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আমলে না নিয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআই রংপুরকে নির্দেশ দেন। এরপর মামলাটির তদন্ত ‍শুরু করেন পিবিআইর এসআই শফিউল আলম।

বিজ্ঞানভিত্তিক তদন্তকালে তথ্য প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে গতকাল সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) মৃত দেলদার মিয়ার মেজ ছেলে সোহেল মিয়া ওরফে লেবু মিয়াকে গ্রেফতার করে পিবিআই। তাকে আদালতে নেওয়া হলে নিজ বাবাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

পুলিশ সুপার জাকির হোসেন আরও জানান, ঘটনার দিন ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি কৃষক দেলদার মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রীর মেয়ে দেলোয়ারা বেগম কিছু বাঁশ ও বাঁশখড়ি নেওয়ার জন্য বাড়িতে আসেন। এ নিয়ে দেলদার মিয়ার চতুর্থ স্ত্রী শাহার বানুর সঙ্গে সতীনের মেয়ে দেলোয়ারার ঝগড়া-বিবাদ হয়। দেলোয়ারা বাঁশঝাড়ে বাঁশ কাটতে গেলে তার বাবা দেলদার মিয়া তাকে বাধা দেন। তখন  ঘটনাস্থলে উপস্থিত সোহেল মিয়া ওরফে লেবু মিয়া তার বোনের পক্ষ নিয়ে বাবা দেলদার মিয়ার সাথে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পরে। এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে বাঁশঝাড়ে থাকা কাটা বাঁশ হাতে নিয়ে তার বাবার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করলে দেলদার মিয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

বিষয়টি ধামাচাপা দিতে দেলদার মিয়ার মৃত্যুর ঘটনাকে দুর্ঘটনা অর্থাৎ বাঁশ কাটতে গিয়ে আকস্মিক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করেন সোহেল মিয়া। এর কিছুদিন পর সোহেল গা ঢাকা দেন এবং দীর্ঘদিন অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে থাকেন।

এদিকে দীর্ঘ চার বছর পর হত্যার রহস্য উদঘাটন হওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরছে বলে দাবি করেন এবিএম জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ছেলে তার বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করে। কিন্তু পরিবারের লোকজন আন্তরিকভাবে সহায়তা না করায় ওই মামলার রহস্য উদঘাটনে সময় লেগেছে। আসামি নিজেই আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। এখন দ্রুততম সময়ের মধ্যে আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই