কক্সবাজারের চকরিয়ায় পিকআপচাপায় পাঁচ ভাইয়ের পর আহত রক্তিম সুশীলও মারা গেছেন। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে (ভেন্টিলেটর) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন তিনি।

হাসপাতাল থেকে রক্তিম শীলের মরদেহ নেওয়া হয় শ্মশানে। পথে চকরিয়ার মালুমঘাটে মেমোরিয়াল খ্রিষ্টান হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্সে ছেলে রক্তিম সুশীলকে শেষবারের মতো দেখতে ছুটে আসেন তার মা মৃনালিণী সুশীল মানু।

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে রক্তিমের মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি চকরিয়ায় পৌঁছায়। ছেলের মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন রক্তিমের মা। ‘হায় রে আর কি সর্বনাশ অইয়ে রে’— বলে মূর্ছা যান তিনি। কান্নায় ভেঙে পড়েন রক্তিমের বোন মুন্নী ও ছোট ভাই প্লাবনসহ এলাকাবাসী। তখন সেখানে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরে সেখান থেকেই রক্তিমের মরদেহ সৎকারের উদ্দেশে শ্মশানে নেওয়া হয়।

মরদেহ পৌঁছানোর খবরে তার গ্রামের বাড়িতে আহাজারি শুরু হয়। কেউই মেনে নিতে পারছেন না রক্তিমের এ মৃত্যুকে। তার স্বজনরা বলছেন, এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে কেউ দায়ী থাকলে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।

ছয় সন্তানকে একসঙ্গে হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় সুরেশ শীলের স্ত্রী ৫০ বছর বয়সী মানু রানী শীল। তার বুক ফাটা আর্তনাদ ভারী করে তুলছে আশেপাশের পরিবেশ।

মিনু রানী শীল আর্তনাদ করে বারবার বলছিলেন, ‘যাদের মানুষ করেছি, তাদের নিয়ে গেছে। কাদের জন্য বাঁচব? মা হয়বো হনে ডাকিবো (মা বলে কে ডাকবে)?’

প্রসঙ্গত, সদ্যপ্রয়াত বাবা সুরেশ চন্দ্রের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে এসে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মালুমঘাট এলাকায় পিকআপ ভ্যানচাপায় পাঁচ ছেলে অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্মরণ সুশীল (২৯) নিহত হন।

ঘটনার ১০ দিন আগে তাদের বাবা সুরেশের মৃত্যু হয়। বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে তারা ৯ ভাইবোন বাড়িতে সমবেত হয়েছিলেন। সেখানকার একটি মন্দিরে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষে একসঙ্গে ৯ ভাইবোন (৭ ভাই ও ২ বোন) হেঁটে বাড়িতে আসার জন্য সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় পিকআপের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই একসঙ্গে চার জনের মৃত্যু হয়, বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরেক ভাই। 

ঘটনায় অক্ষত অবস্থায় বেঁচে যান সুরেশ চন্দ্র সুশীলের মেয়ে মুন্নী সুশীল। আহত হন সুরেশ চন্দ্রের আরও দুই ছেলে ও এক মেয়ে।

আহতদের মধ্যে রক্তিম শীল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রামের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে মারা গেছেন। নিহতদের বোন হীরা শীল মালুমঘাট খ্রিষ্টান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার একটি পা কেটে ফেলা হয়েছে।

নিহতদের বোন মুন্নী সুশীল ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, ঘটনার সময় অন্য ভাইবোনদের সঙ্গে আমিও উপস্থিত ছিলাম। আমরা মৃত বাবার জন্য পূজা শেষে বাড়ি ফিরতে রাস্তা পার হচ্ছিলাম। তখনই পিকআপটি ধাক্কা দিলে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। পিকআপ প্রথমে ধাক্কা দিয়ে কিছুদূর সামনে এগিয়ে গিয়েছিল। পরে চালক গাড়িটি পিছনের দিকে চালিয়ে এনে চাপা দিয়ে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এটা নিছক দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে পাঁচ ভাইকে চাপা দেওয়া পিকআপ ভ্যানের চালক সাহিদুল ইসলামকে শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আটক করেছে র‌্যাব। তাকে আটকের পর র‌্যাব জানায়, ঘটনার দিন রাস্তায় অধিক কুয়াশা থাকা সত্ত্বেও চালক দ্রুত কক্সবাজার পৌঁছে সবজি ডেলিভারি দেওয়ার জন্য বেপরোয়াভাবে পিকআপটি চালাচ্ছিলেন। অধিক কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতির কারণে মালুমঘাট বাজারের নার্সারি গেটের সামনে রাস্তা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষারতদের দূর থেকে লক্ষ্য করেননি তিনি। গাড়ির অধিক গতি থাকার কারণে কাছাকাছি এসে লক্ষ্য করলেও গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।

সাইদুল ফরহাদ/এসএসএইচ