বিভিন্ন পণ্যের কর বাড়ানোর ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্তৃত্ববাদী মনোভাব পরিহারের পরামর্শ দিয়েছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম।

তিনি বলেন, পণ্যের ওপর ট্যাক্স বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করা হয় না। এতে ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়। যা দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের পরিবেশ নষ্ট করে। এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। গুটিকয়েক চোরের কারণে সব ব্যবসায়ীকে চোর হিসেবে দেখা হয়। তাদের নানাভাবে নানা কারণে হয়রানি করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) ঢাকা চেম্বারের ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনা 'বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা' শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এছাড়া ব্যবসায়ীদের শীর্ষ নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের পক্ষ থেকে আয়কর, ভ্যাট, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২২টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, সারা বিশ্বে গড় কর্পোরেট করের হার ২৩ শতাংশ, কিন্তু দেশে কর্পোরেট করের হার ৩০ শতাংশ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার পরামর্শ মেনে অন্যান্য দেশগুলো ট্যাক্স কমিয়ে আনছে কিন্তু আমাদের এখানে সে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, হঠাৎ সরকার ভ্যাট যুক্ত করে দিল, কিন্তু অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো এখনো রেডি হয়নি। কারো সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই হঠাৎ একটা পণ্যের ওপর ট্যাক্স ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করে দেওয়া হয়। এতে ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস ভেঙে যাচ্ছে আত্মবিশ্বাস নষ্ট হচ্ছে সেটার কারণে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। এনবিআরের কর্তৃত্ববাদী মনোভাব পরিহার করতে হবে। না হলে সরকারের ব্যবসাবান্ধব যে মনোভাব, সেটা নষ্ট হবে। যে কর হার ঠিক করবে, সে কর তুলবে এটা কীভাবে হয়। কর নির্ধারণ ও কর আদায়ে আলাদা সংস্থা থাকা উচিত। ট্যারিফ কমিশন বা অন্য কোনো সংস্থা এটা করতে পারে।

কিছু প্রকল্প মানুষের ভোগান্তির কারণ হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অদক্ষতার কারণে অনেক প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বেড়ে যায়, এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিআরটি মানুষকে এতো দুর্ভোগ দিচ্ছে। এটা ৯ বছর ধরে চলছে। মানুষকে সীমাহীন কষ্ট দিচ্ছে। এ জন্য যারা দায়ী তাদের অবশ্যই শাস্তি দেওয়া উচিত।

দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের আরও বেশি প্রণোদনা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তারা ছোট, তাদের হয়ত কমপ্লায়েন্স নেই, কারো ট্রেড লাইসেন্স নেই, কারো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই, এজন্য তারা বিভিন্ন প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হন। তারা কিন্তু এ দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড, এটা আমাদের স্বীকার করতে হবে। তাই তাদের কীভাবে সহযোগিতা দেওয়া যায়, সেটা আমাদের ভাবতে হবে।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, ব্যবসায়ীদের সহজে ব্যবসা করার সুযোগ দেন। বছরের ৩৫ থেকে ৫০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য যুক্ত হচ্ছে। এ জন্য দেশে ব্যবসার পরিবেশ আরও সহজ হতে হবে। এসব ডুইং বিজনেস সহজ হলেই দেশে আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসবে, দেশে বিনিয়োগ বাড়বে।

তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে বিশেষ নজর দিতে হবে। জার্মানি ও আমেরিকার মতো দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হচ্ছে এসএমই। সুতরাং তাদের কথাই আগে ভাবতে হবে। এটা কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে বড় জায়গা।

এসআর/এসকেডি