চলতি মূলধন ঋণ সীমা বাড়ানোর সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এ ঋণ সীমা বাড়াতে পারবে। অর্থাৎ কোনো গ্রাহকের চলতি মূলধন ঋণ সীমা যদি ১০০ টাকা নির্ধারণ করা থাকে, চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলো এখন ওই গ্রাহককে ১০০ টাকার বেশি ঋণ দিতে পারবে।  

বুধবার (২৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত এক একটি নির্দেশনা দিয়ে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে। উৎপাদন কার্যক্রম চলমান রাখার পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানিসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখতে এ সুযোগ দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।    

এতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালসহ বিভিন্ন উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ঋণগ্রহীতাদের অনুকূলে তফসিলি ব্যাংকগুলোর ইতোমধ্যে মঞ্জুরীকৃত চলতি মূলধন ঋণ সীমার সর্বোচ্চ ব্যবহার সত্ত্বেও চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মূল্য পরিশোধসহ উৎপাদন কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে আমদানি-রপ্তানিসহ চলমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতিশীলতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ অবস্থায় মঞ্জুরি করা চলতি মূলধন ঋণ সীমা প্রয়োজনে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে বাড়ানো যাবে। তবে ঋণ ঝুঁকি বিবেচনা ও গ্রাহকের আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর আগে গত ৩১ মার্চ চলতি মূলধন ঋণ সীমা অন্তত ৪০ শতাংশ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছে চিঠি দেয় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

চিঠিতে এফবিসিসিআই জানায়, বিরাজমান কোভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্য ও জাহাজ ভাড়া প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কাঁচামাল, শিপিং, যাবতীয় লেনদেন চার্জসহ অন্যান্য খরচ বাড়ার কারণে দেশের উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এছাড়াও আমদানি কর পণ্যের দাম বাড়ার কারণে কর আপাতন বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসহ সকল ধরনের পণ্যের দাম ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটছে। কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে ব্যবসায়ীদের ঋণ সীমা উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক উভয়ই স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারছেন না। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় মূলধন সীমা বাড়ানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, চলমান এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের ব্যাংকিং সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে বিদ্যমান চলতি মূলধন ঋণ সীমা অন্তত ৪০ শতাংশ বাড়ানো দরকার। সেজন্য সকল তফসিলি ব্যাংককে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য গভর্নরকে বিশেষ অনুরোধ জানান তিনি।  
ব্যবসায়ীদের এ আবেদনের প্রেক্ষিতে আজকে চলতি মূলধন ঋণ সীমা বাড়নোর সুযোগ দিয়ে নির্দেশনা দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এসআই/এসকেডি