অর্থনৈতিক জটিলতায় রাজস্ব বাজেটে ভর্তুকি ৯০ হাজার কোটি হতে পারে
গত ১৫ বছরের মধ্যে এবারই দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি জটিল পর্যায়ে রয়েছে। অর্থনীতির ভঙ্গুরতা সবচেয়ে বেশি প্রকাশ পায় মূল্যস্ফীতি ও টাকা বিনিময় হার এবং সুদের হারের ভেতর দিয়ে। ফলে ঘাটতি পূরণে রাজস্ব বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ অনেক বাড়বে। এবার তার পরিমাণ ৯০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেল ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘কেমন বাজেট চাই’ এ অংশ নিয়ে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি বা ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বিএনপি নেতা ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ড. মঈন খানসহ বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরের পর দেশে অর্থনীতি এত খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত ১৫ বছরের মধ্যে এবারই দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি একটি জটিল পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। অর্থনীতির এ ভঙ্গুরতা সবচেয়ে বেশি প্রকাশ পায় মূল্যস্ফীতি ও টাকা বিনিময় হার এবং সুদের হারের ভেতর দিয়ে। ফলে ঘাটতি পূরণে রাজস্ব বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ অনেক বাড়বে। এটা ৫৫ হাজার কোটি টাকা থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, সরকারের দায়-দেনা পরিশোধের জন্য সরকারের অর্থের প্রয়োজন আরো হবে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিগত সময়ে আমাদের শক্তির জায়গা ছিল বৈদেশিক খাত। গত বছর কিছুটা ইতিবাচক ছিল। সেটা এখন প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি ডলারের মতো ঘাটতি রয়েছে এবং এই ঘাটতি আরো বাড়বে। অনেকে বলছে আমাদের রপ্তানি বাড়ছে, কিন্তু আমরা ভুলে যাই আমদানি পণ্যের দাম বাড়ার কারণে এটা হয়েছে। আমার ধারণ বাণিজ্য ঘাটতি তিন হাজার ২০০ কোটিতে দাঁড়াবে, অর্থাৎ টাকার মূল্যমানের ওপর যে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এখনই ৯৪ থেকে ৯৫ টাকায় এলসি খোলা হচ্ছে আর সরকারের হিসাবে ডলারের দাম ৮৭ টাকা। এটাকে কতদিন টিকিয়ে রাখতে পারবে সরকার।
বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় বলেন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব আছে। স্বল্পআয়ের মানুষকে সুরক্ষা দিতে হবে। করযোগ্য সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা হওয়া উচিত। দেখতে হবে দুর্বল জনগোষ্ঠীকে আর কোনো জায়গায় কর সুরক্ষা দেওয়া যায় কি না। নিরাপত্তা বেষ্টনীতে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ ছিল। কিন্তু ২ শতাংশের বেশি খরচ করতে পারিনি।
তিনি বলেন, আমরা বলি অনেক বড় বাজেট। আমি বলি এটা ফিসক্যাল ইউলেশন। যে বাজেট ঘোষণা করা হয়, তা সংশোধনের সময় ২০ শতাংশ কেটে দেওয়া হয়। বাজেট পরিকল্পনা ১৩ শতাংশের বেশি বাস্তবায়ন হয়। আমাদের সাড়ে ১৬ কোটির দেশ। ৭৪ লাখ লোকের ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) রয়েছে। আর ট্যাক্স দেয় শুধু ৩০ লাখ মানুষ। এত জিডিপি হলে মানুষ কেন ট্যাক্স দেয় না?
আরএম/এসএসএইচ