অনেকক্ষণ ধরে বউ বাজারে মাংসের দোকানে ঘুরলেন সুফিয়া বেগম। স্থানীয় একটি মেসে রান্না করেন তিনি। তাই নিয়মিত নিজেই বাজার করেন। শুক্রবার বলে মেসে আজ গরুর মাংস খাওয়ানোর কথা। কিন্তু ২৩ জনের মেসে বাজারের খরচের লিমিট ১৫০০ টাকা। এর মধ্যেই সব কিনতে হবে। তাই গরুর মাংস আর কেনা হয়নি সুফিয়ার।

তিনি বলছেন, দুই কেজি গরুর মাংস কিনতে খরচ পড়বে ১৩৬০ টাকা। তাই গরু বাদ দিয়ে দুই কেজি মুরগির মাংস কিনেছি, সাথে দুই ডজন ডিম। এর বাইরে চাল, ডাল, মসলা ও সবজিও কিনতে হবে বাকি টাকার মধ্যে। 

তিনি বলেন, ডিমের দাম বেশি। মুরগির দাম কমেছে ১০ টাকা। মুরগির দাম গরুর মাংসের চেয়ে কম, তাবুও আগের তুলনায় বেশি। শুধু সাশ্রয়ের আশায় মুরগিই কেনা। এই অবস্থা রমজান থেকে চলছে। 

রাজধানীর পশ্চিম শেওড়াপাড়ার অলি মিয়ারটেক বউ বাজারে শুধু সুফিয়া বেগম নন, স্থানীয়দের অনেকে আজ ভিড় করছেন মুরগির দোকানে।

শুক্রবার (২৭ মে) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ছুটির দিন হওয়ায় বউ বাজারে ক্রেতাদের অনেক ভিড়। তবে ক্রেতাদের মধ্যে ডিম আর মাংসের দাম নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। পাশাপাশি ৯টি মাংসের দোকানে। ৫টিতে মুরগি ও ৪টিতে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। তবে গরুর মাংসের তুলনায় ক্রেতাদের ভিড় বেশি মুরগির দোকানে।  

কথা হয় ক্রেতা শবনম আরার সঙ্গে। ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাজার করতে এসেছেন তিনি। তিনি বলেন, এক কেজি গরুর মাংস কিনলে একবেলা খাওয়া যায়, প্রায় একই দামে মিলছে আড়াই কেজি কক মুরগি। গরুর মাংস খাওয়া যেন, 'অনেকটা আঙ্গুর ফল টক' এর মতো। তাই দুটি মুরগি কিনেছি।

মুরগি বিক্রেতা আলামিন বলেন, ব্রয়লার ছিল ১৪০ টাকা কেজি। আজ কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে। ১৪৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। কক মুরগির কেজি ২৯০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৭০ টাকা কেজি, কবুতর জোড়া ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা। দেশি মুরগি বিক্রি করছি না, ক্রেতা পাওয়া যায় না। পাইকারি কিনতে হয় ৫৫০ টাকায়।

স্থানীয় বাড়ির মালিক মসিউর রহমান বলেন, ওয়ারিতে দোকান। বাজার বাসায় পৌঁছে দিয়ে দোকানে যাব। বাজারে যা অবস্থা! কোনো কিছু কিনে শান্তি নেই। এই যে দেখেন গরুর মাংস ৬৮০ টাকা। তাও নিজের পছন্দে কিনতে পারব না। যেভাবে সাজিয়ে রাখছে তাতে চর্বি আর হাড়সহ কিনতে হচ্ছে। দামেও শান্তি নেই, শান্তি নেই পছন্দেও।

গরুর মাংস বিক্রেতা সাহাদাত হোসেন বলেন, পুরো রমজান মাসজুড়ে ৭০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করেছি। গরু কিনি গাবতলী হাট থেকে। দাম কিছুটা কমায় ২০ টাকা কমে আজ মাংস বিক্রি করছি। 

ডিমের দোকানে ভিড় দেখা যায়নি। পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ডিম ১২০ টাকা ডজন। ছোট সাইজের ডিম ১১৮ টাকা। 

সাইফুল ইসলাম নামে পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী বলেন, বড় ডিম সকালে এসে কিনে নিয়ে যান মুদি ও হোটেল ব্যবসায়ীরা। রয়ে যায় ছোট ডিম। ডজন প্রতি তাই ২/৩ টাকা কমে বিক্রি করছি।

জেইউ/এসকেডি