নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য বাজারজাতকরণে সহায়তা করতে দেশে প্রথমবারের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছে বিশ্বব্যাংক ও এসএমই ফাউন্ডেশন। এসএমইএফ সাপ্লায়ার্স প্ল্যাটফর্ম ফর উইমেন এন্টারপ্রেনার্স নামের এ প্ল্যাটফর্মে নারী উদ্যোক্তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিক্রি করতে পারবে।  

বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে এই কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়াং টেমবন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে প্রায় ১০ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং প্রায় ৬৮ লাখ কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে; যার ৭ দশমিক ২১ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। নারীর জন্য সহায়ক কর্মপরিবেশ তৈরি এবং নানাবিধ প্রণোদনার কারণে দেশে নারী-উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বাংলাদেশে করপোরেট সাপ্লাই চেইনে নারী-উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ খুবই কম। অন্যদিকে, বিশ্বব্যাপী সব এসএমই উদ্যোগের এক-তৃতীয়াংশ নারী-উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন।

ফরচুন-৫০০ পরিচালিত ৮০টি বহুজাতিক করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, প্রতি বছর গড়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্রয় বিক্রয়ের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হয়ে থাকে।

আর বাংলাদেশের নারী-উদ্যোক্তারা করপোরেট ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে যুক্ত নেই বললেই চলে। গুণগতমানসম্পন্ন যুৎসই পণ্য উৎপাদন করতে না পারা, প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাব, উপযুক্ত বাজারের সাথে সংযুক্ত হতে না পারা, করপোরেট হাউজের চাহিদা সম্পর্কে তথ্যের অভাব, অসম বাজার প্রতিযোগিতাসহ নানা কারণে নারী-উদ্যোক্তাগণ করপোরেট হাউজের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারছেন না।

অপরদিকে, প্রয়োজনীয় প্ল্যাটফর্ম না থাকা, নারী-উদ্যোক্তাদের সাথে কাজ করতে সক্ষমতার ঘাটতি, তাদের পণ্য সম্পর্কে তথ্যের অভাব, নারী-উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করার সুদূরপ্রসারী ফলাফল উপলব্ধি করতে না পারার কারণে করপোরেট হাউজগুলোও নারী-উদ্যোক্তাদের পণ্য ক্রয় করতে পারে না।

এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, পণ্যের বাজার সংযোগ বা বাজারজাতকরণ নারী-উদ্যোক্তাদের জন্য অন্যতম প্রধান একটি বাধা। ব্যবসা শুরুর প্রথম পর্যায়ে এ সমস্যা আরও প্রকট। গবেষণায় দেখা যায়, ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ৩৭ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তা পুঁজি সংকটের কথা উল্লেখ করলেও ২০ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তা তাদের প্রধান সমস্যা হিসেবে পণ্যের বাজারজাতকরণকে চিহ্নিত করছেন।

এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রচেষ্টায় দেশের সরকারি ক্রয়ের অন্তত ২৫ শতাংশ এসএমই খাত থেকে সংগ্রহ করার বাধ্যবাধকতা রেখে শিল্প মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে সাব-কন্ট্রাকটিং আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। আইনটি কার্যকর হলে এসএমই খাতের জন্য পণ্যের বাজারের ব্যাপকতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। 
এ সুযোগ কাজে লাগাতে এসএমই উদ্যোক্তা, বিশেষ করে নারী-উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন। বিশ্বব্যাংক ও এসএমই ফাউন্ডেশন নারী-উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় এসএমইএফ সাপ্লায়ার্স প্ল্যাটফর্ম ফর উইমেন এন্টারপ্রেনার্সে তথ্য সন্নিবেশিত করবে। এ প্ল্যাটফর্ম নারী-উদ্যোক্তাদের পণ্যের বাজার খুঁজে পেতে বিশেষ করে করপোরেট হাউজগুলোকে তাদের পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।

পাশাপাশি, করপোরেট হাউজগুলোকেও পণ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে নারী-উদ্যোক্তাদের খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। এছাড়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নারী-উদ্যোক্তাদের জন্য তাদের ঋণ বিষয়ক তথ্য এই প্ল্যাটফর্মে উপস্থাপন করতে পারবে এবং সেসব নারী-উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক প্রোফাইলের অবস্থা মূল্যায়ন করে অর্থায়নের ব্যবস্থা করবে। ফলে, এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নারী-উদ্যোক্তা, করপোরেট হাউজ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ সব পক্ষ উপকৃত হবে।

www.wsmesuppliersplatform.smef.gov.bd ঠিকানায় একজন নারী-উদ্যোক্তা, করপোরেট ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি নিজেই নিবন্ধন করতে পারবেন।

এসআই/আরএইচ