জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বহুলাংশে বাড়াবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। পাশাপাশি এ পদক্ষেপ মূল্যস্ফীতি আরও উসকে দেবে বলেও মনে করছে সংস্থাটি। 

একই সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টি সরাসরি ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত হয়নি বলেও মনে করছে সিপিডি। 

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম শনিবার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার জ্বালানি তেলের দাম যে পরিমাণে বাড়িয়েছে তা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এটা সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। ডিজেলের ব্যবহার যে খাতগুলোতে বেশি হয় যেমন- পরিবহন, কৃষি, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাত— এসব ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হবে। এর প্রভাব পড়বে ভোক্তার ওপর।

পরিবহন ভাড়ার ওপর এর প্রতিক্রিয়া সঙ্গে সঙ্গেই পড়তে যাচ্ছে— এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, পরিবহন মালিকরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এর প্রতিক্রিয়া সরাসরি ভোক্তার ওপর পড়বে। আমার মনে হয় এই প্রতিক্রিয়া সঙ্গে সঙ্গেই পড়তে যাচ্ছে। কৃষি খাতে শুষ্ক মৌসুমে ডিজেলের মাধ্যমে সেচের ব্যবহারের ওপর প্রভাব পড়বে। ফলে শাকসবজিসহ কৃষিপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে।  

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। ফাইল ছবি। 

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ক্যাপটিভ পাওয়ার অর্থাৎ ডিজেল ব্যবহার বন্ধের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। হয়তো এখনই এর প্রতিক্রিয়া থাকবে না। কিন্তু ব্যক্তিপর্যায়ে ডিজেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎসহ অন্যান্য বিষয়ে একটা প্রতিক্রিয়া থাকবে। সুতরাং সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে বলে মনে হয়। দাম বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে।

তিনি বলেন, দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে ঋণের আলোচনার শর্ত হিসেবে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আমাদের কাছে মনে হয়েছে এটি ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া। সরকারের এ উদ্যোগটি যথাযথ হয়নি। বরং বিপিসির উদ্বৃত্ত যে অর্থ ছিল, সরকার তা না নিয়ে ভর্তুকির কাজে ব্যবহার করতে পারত। ফলে জ্বালানি তেলের দাম না বাড়ালেও চলত। বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও যদি এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসে, সেক্ষেত্রেও সরকারের উচিত ছিল ক্যাপাসিটি চার্জের যে জায়গায় ভর্তুকি দিতে হয়, সেখান থেকে সরে আসার কৌশল খোঁজা। অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদের পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

শুক্রবার রাত ১২টার পর জ্বালানি তেলের নতুন দাম কার্যকর করেছে সরকার। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রোলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে।

এতদিন কেরোসিন ও ডিজেল প্রতি লিটার ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা আর পেট্রোল ৮৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।

আরএম/এনএফ