জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি শিল্পখাতে পণ্য উৎপাদন ও পরিবহন খরচ আরও বাড়িয়ে দেবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যয় বাড়বে, পণ্যের মূল্য বাড়বে। এর ফলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ আরও পিছিয়ে পড়বে এবং স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমনটাই মনে করছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।  

রোববার (৭ আগস্ট) এক বিবৃতিতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানায় ঢাকা চেম্বার। বিবৃতিতে চেম্বার জানায়, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কমে আসা সত্ত্বেও সরকার গত ৫ আগস্ট ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম ৪২.৫ শতাংশ থেকে ৫২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। যা দেশের আপামর জনগণের জীবনযাত্রার পাশাপাশি সার্বিকভাবে আমাদের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
 
ঢাকার ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি বলছে, বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারির প্রভাব কমে আসার পর ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে গতির সঞ্চার হওয়ার মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতিতে পুনরুজ্জীবনের একটি ছবি পরিলক্ষিত হচ্ছিল। এ অবস্থায় চলতি বছরের জুন মাসে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি এবং গত ৫ আগস্ট ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন খাতে খরচ বৃদ্ধির মাধ্যমে সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতিকে আরো বাড়িয়ে দেবে। যার ফলে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রায় দুর্ভোগ নেমে আসবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানি করা জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে, যে কারণে আমাদের শিল্পখাত প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের অভাবে স্বাভাবিক উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে পারছে না, যার প্রভাব রপ্তানি বাণিজ্যে পড়তে পারে।    

বিশেষ করে, অস্বাভাবিক হারে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং সম্প্রতি ইউরিয়া সারের মূল্য কেজি প্রতি প্রায় ৬ টাকা বাড়ানো কৃষিখাতকে চাপে ফেলবে। এ খাতটি আমাদের জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার পাশাপাশি প্রান্তিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে থাকে। তাছাড়া জ্বালানির দাম বাড়ায় শিল্পখাতে আমাদের পণ্য উৎপাদন ও পণ্য পরিবহন খরচকে আরও বাড়িয়ে দেবে, যার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যয় বাড়বে, পণ্যের মূল্য বাড়তে পারে। এর ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ আরও পিছিয়ে পড়বে এবং স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে।  

সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় ঢাকা চেম্বার মনে করে, দেশের দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে গ্যাস উত্তোলন কার্যক্রম সম্প্রসারণের কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া এনার্জি মিক্স, জ্বালানি ব্যবহারে অপচয় হ্রাস ও কস্ট অ্যান্ড এনার্জি এফিশিয়েন্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থাপনা একান্ত জরুরি। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে কৃচ্ছ্র সাধনে আরো কঠোর তদারকি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্য কমে এলে তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দ্রুত স্থানীয় বাজারে জ্বালানির মূল্য কমাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ডিসিসিআই।

এসআই/জেডএস