পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন সাধারণ মানুষ। যার প্রভাব পড়েছে রাজধানীর ফিলিং স্টেশনগুলোতে। শনিবার (৬ আগস্ট) সকালে বাড্ডা-রামপুরা এলাকার একাধিক পাম্পে গিয়ে দেখা গেছে, খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ পাম্পে আসছেন না। কর্তৃপক্ষ বলছে, অন্যান্য দিনের তুলনায় বিক্রি নেমে ঠেকেছে অর্ধেকে।

ফিলিং স্টেশনে জ্বালানি নিতে আসা শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, আমরা কেমন দেশে বাস করি, যেখানে জনগণের কোনো মতামতের প্রয়োজন হয় না, জনগণের সামর্থ্যের কথা বিবেচনা হয় না। যখন যার যেটা করতে ইচ্ছে হয় সেটা করছে, যখন ইচ্ছে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না।

তিনি বলেন, সরকারি লোকেরা চুরি করতে করতে এমন অবস্থায় পৌঁছেছে, চুরি এখন সাধারণ মানুষের মাথার ওপর চাপিয়ে দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই। হঠাৎ তেলের দাম বাড়িয়ে সরকার নিজেদের বোঝা হালকা করছে।

রাসেল ইসলাম নামের একজন বলেন, হুট করে তেলের দাম সরকার এতো বাড়িয়ে দিয়েছে, কী বলব কিছুই বুঝতে পারছি না।আমাদের কিছু বলার নেই, কারণ আমরা বললে কোনো লাভও হয় না। সাধারণ মানুষের কথায় কিছু যায় আসে না।

তিনি বলেন, গতকালই আমার গাড়িতে তেল শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে আর নেওয়া হয়নি। আজকে পাম্পে এসে দেখি দাম প্রায় অর্ধেক বেড়ে গেছে। এর প্রভাব তো সব পর্যায়েই পড়বে। আমরা কোথায় যাব? কীভাবে বাঁচব?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, সরকার যখন যে সিদ্ধান্ত নেবে আমাদের সেটাই মেনে নিতে হবে। আমরা এমন এক দেশে বসবাস করি, যেখানে আমাদের খুব বেশি মতামত প্রদান বা মূল্যায়নের সুযোগ নেই। সরকার তেলের দাম বাড়িয়েছে, আমরা যারা গাড়ি চালাই আমাদেরকে বাধ্য হয়ে সে দামেই কিনতে হবে।

দাম বাড়ানোয় বিরূপ প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিরূপ প্রভাব তো অবশ্যই পড়বে। জ্বালানি এমন একটা জিনিস, যার দাম বাড়লে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যায়। তেলের দাম তো প্রায় অর্ধেক বেড়েছে এখন দেখার বিষয়, বাকি জিনিসের দাম কেমন বাড়ে।

মেসার্স মালিবাগ অটো সার্ভিস পাম্পের সেলসম্যান মো. আরমান হোসেন বলেন, তেলের দাম বাড়ায় পাম্পে গাড়ির সংখ্যা অনেক কমে গেছে। অনেক মানুষ আছে তারা তেলের দাম শুনেই ভয়ে চলে যায়। হঠাৎ করে এতো দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় এমনটা হচ্ছে। শুরুতে যদি ১০/২০ টাকা কররে বাড়াত, পরে প্রয়োজনে আবার বাড়াত... কিন্তু হঠাৎ এতো বাড়িয়ে দেওয়া আসলে উচিত হয়নি।

তিনি বলেন, অন্যান্য দিনে এই সময়ের মধ্যে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার তেল বিক্রি করতাম, কিন্তু এখন পর্যন্ত ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার তেল বিক্রি হয়েছে। যাদের খুব বেশি প্রয়োজন তারা আসছে। বাকিরা তেল কম খরচ করছে, কেউ রিকশায় চলছে বা পায়ে হাঁটছে।

পাম্পটির অ্যাকাউন্ট ক্যাশিয়ারের দায়িত্বে থাকা মো. রমজান বলেন, দাম বাড়ানোর পর পাম্পে মানুষ কম আসছে। অন্য দিনের তুলনায় আমাদের বিক্রিও অনেক কম। আগে মানুষ বেশি কিনিত, বেশি ব্যবহার করত, এখন মানুষ কম ব্যবহার করছে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোলের মূল্য ভোক্তা পর্যায়ে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। রাত ১২টার পর থেকে ডিপোর ৪০ কিলোমিটারের ভেতর ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা মূল্য লিটারপ্রতি ডিজেল ও কেরোসিন ১১৪ টাকা, লিটারপ্রতি অকটেন ১৩৫ টাকা ও লিটারপ্রতি পেট্রোল ১৩০ টাকা হবে। 

এতদিন কেরোসিন ও ডিজেল প্রতি লিটার ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা প্রতি লিটার ও পেট্রোল ৮৬ টাকা প্রতি লিটারে বিক্রি হচ্ছিল।

টিআই/ওএফ