অস্বাভাবিকভাবে ডিমের দাম বাড়ানোর কারসাজিতে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

সোমবার (২২ আগস্ট) নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর বাজার ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ে নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানিয়েছেন এফবিসিসিআই নেতারা।

অনলাইনে যুক্ত হয়ে সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, একদিনে ডিমের দাম তিন টাকা বেড়ে যাবে, সরকারি সংস্থার অভিযানের পর আবার দাম কমে যাবে, এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

সম্প্রতি ডিমের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদ্প্তরের অভিযানের পর দাম কমে যায়। এর মাধ্যমেই ডিমের বাজারে কারসাজি প্রমাণিত হয়েছে বলে মনে করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে উদ্দেশ করে সভাপতি বলেন, ডিমের বাজারে কারসাজিতে জড়িত কাউকে খুঁজে পেলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে অন্য কেউ এই সুযোগ না নিতে পারে।

তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বাড়লে দেশেও দাম বাড়ে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশে তার প্রভাব পড়ে না। সামান্য কয়েকজনের জন্য পুরো ব্যবসায়ী মহলকে অসাধু হিসেবে বদনাম শুনতে হচ্ছে।

লোভের বশবর্তী হয়ে সুযোগ পেলেই তার অপব্যবহার করতে থাকলে সরকার তখন বাধ্য হয়ে আমদানি শুরু করবে। তখন স্থানীয় শিল্প বিপাকে পড়বে। তাই দোষীদের খুঁজে বের করা ব্যবসায়ীদেরও দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেন সভাপতি। এসময় সরকারি সংস্থাগুলোকে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন খাতের মনোপলি ভাঙার আহ্বান জানান তিনি।

সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, বাজারে কারসাজির জন্য ব্যবসায়ীদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মানুষের কাছে ব্যবসায়ীদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। ডিমের বাজারে যদি কোনো অনিয়ম, আইন বিরোধী কাজ হয়ে থাকে, তাহলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সিনিয়র সহ-সভাপতি বলেন, এসব কার্যক্রমে এফবিসিসিআই পাশে থাকবে। বহুমুখী সমবায় সমিতিগুলোর ব্যবসার লাইসেন্স নেই জানিয়ে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, তারা কীভাবে ডিমের দাম নির্ধারণ করে? বিষয়গুলো কেন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের নজরে আসেনি, এমন প্রশ্নও রাখেন তিনি।

সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন আলমগীর বলেন, প্রায় ১৭ কোটি মানুষকে ডিম ও মুরগি সরবরাহ করে প্রোটিনের চাহিদা মেটাচ্ছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে ব্যবসায়ীদের এত বছরের অর্জন ও সম্মান নষ্ট হয়েছে। এসময় তিনি ব্যবসায়ীদের প্রতি অতি মুনাফা করার প্রবণতা ত্যাগ করার আহ্বান জানান।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক এ. এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ডিমের বাজারে কারসাজি হয়েছে, এটা স্পষ্ট। যারা এটা করেছে তারা পুরো ব্যবসায়ী সমাজকে কলুষিত করেছে। তিন দিনের অভিযানে ডিমের দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কমেছে। তার মানে কোনো একটা পক্ষ বাজারে কারসাজি করেছে। যারা এটা করেছে তাদের বিরুদ্ধে অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনে মামলা করা হবে বলেও জানান তিনি।

মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্রিডারস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ এগ প্রোডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন, বিভিন্ন বাজারের বহুমুখী সমিতির নেতা, আড়তদার ও ডিম সরবরাহকারী বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জিনাত সুলতানা।

সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী, মো. হাবীব উল্লাহ ডন, পরিচালক ও মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।

এসআই/জেডএস