আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে পছন্দসই ১২৭ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়েই কপাল পুড়ল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আমিন ভূঁইয়ার। ‘ফাইভ পি’ মন্ত্রে পুঁজিবাজারকে ডিজিটালাইজড করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করার মাত্র ১৩ মাসের মাথায় পদত্যাগ করেতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

সোমবার (২২ আগস্ট) পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ ছাড়াই নিজের ইচ্ছেমতো ১২৭ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেন এমডি। এরমধ্যে ছয় (৩ জন জিএম ও ৩ জন এজিএম) কর্মকর্তাকে আইনের বাইরে গিয়ে পদোন্নতি দেন তিনি। আর তাতে পরিচালনা পর্ষদ তার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়। পর্ষদের চাপের মুখে তিনি পদত্যাগ করেছেন

ডি-মিউচুয়ালাইজেশন (স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা আলাদাকরণ) আইন অনুসারে, জনবল কাঠামোতে স্টক এক্সচেঞ্জে সিনিয়র কোনো পদ নেই। নতুন পদ সৃষ্টি করতে হলে প্রথমে বোর্ডের অনুমোদন লাগবে। পরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এ ধরনের কোনো অনুমোদন নেয়নি।

অন্যদিকে ডিএসইর নিয়ম অনুসারে ডিজিএম পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে এনআরসির সুপারিশ লাগে। কমিটি যাচাই বাছাই করে পদোন্নতির সুপারিশ করে। কিন্তু কাউকে তোয়াক্কা না করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক একক ইচ্ছায় এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এছাড়াও ডিএসইতে ডাটা সেন্টার গড়ে তুলতে কাজ করছিলেন এমডি। এই সেন্টার গড়ে তুলতে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ ও শেয়ারহোল্ডারদের একটি গ্রুপের পরিকল্পনা ছিল ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করার। কিন্তু তারিক আমিন ভূঁইয়া সেই প্রকল্পটি মাত্র ৪০ কোটি টাকা সমাপ্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। সেই অনুসারে কাজও করছিলেন। ফলে পর্ষদ ও শেয়ারহোল্ডারদের গ্রুপটি তার ওপর চাপ সৃষ্টি করছিল।

এদিকে পদত্যাগের বিষয়ে তারিক আমিন ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অস্ট্রেলিয়ান প্রবাসী তারিক আমিন ভূঁইয়া গত বছরের ২৫ জুলাই ডিএসইর এমডি হিসেবে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ১৩ মাসের মাথায় পদত্যাগ করলেন তিনি। প্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞ এই ব্যক্তিকে তিন বছরের জন্য ডিএসইর এমডি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এর আগের মাত্র ১১ মাস দায়িত্ব পালন করে এমডি পদ থেকে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন কাজী ছানাউল হক। তার আগে ডি-মিউচুয়ালাইজেশন পরবর্তী ডিএসইর দ্বিতীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কেএএম মাজেদুর রহমান। আর ডি-মিউচুয়ালাইজেশন পরবর্তী প্রথম এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিএসইসির সাবেক কমিশনার অধ্যাপক স্বপন কুমার বালা।

এদিকে তারিক আমিন ভূঁইয়ার পদত্যাগের বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন বছরের জন্য ডিএসইর এমডি হিসেবে যোগদান করেন তারিক আমিন ভূঁইয়া। মঙ্গলবার তিনি ই-মেইলে আমাকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।

দেড় পৃষ্ঠার পদত্যাগপত্র তিনি লিখেছেন, ১৩ মাস সময় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানা সমস্যার কারণে পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করতে পারেননি। আগামী অক্টোবরের শেষে দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করছি।

ইউনুসুর রহমান বলেন, তিনি চিঠিতে যা লিখেছেন, তার সারসংক্ষেপ হলো- যেভাবে তিনি কাজ করতে চাচ্ছিলেন, সেভাবে কাজ করতে পারছেন না। তাই এ অবস্থায় তিনি আর সংস্থাটির এমডির দায়িত্বে থাকতে চাচ্ছেন না।

ইউনুস বলেন, ডিএসই রেগুলেশন ২০১৩ অর্থাৎ ডি-মিউচ্যুালাইজেশন আইন অনুসারে, একক ক্ষমতা বলে এমডি প্রতিষ্ঠানটির এজিএম থেকে জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) হিসেবে কাউকে পদোন্নতি দিতে পারেন না। পদোন্নতি দিতে হলে তাকে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিতে হবে।

ইউনুস বলেন, এমডি তার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে ৩ জন এজিএমকে জিএম পদে পদোন্নতি দিয়েছেন। একইভাবে তিনজন জিএমকে সিনিয়র জিএম করেছেন। আমরা এই ছয় জনের পদোন্নতি বাতিলের জন্য এমডিকে নির্দেশ দিয়েছি।

এই নির্দেশ দেওয়ার পর মঙ্গলবার সিনিয়র তিন জিএমের পদোন্নতি বাতিল করে চিঠি দিয়েছেন এমডি। কিন্তু এজিএম থেকে জিএম হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া তিনজনকে পদ বাতিলের চিঠি দেননি।

এমআই/এমএইচএস