নির্মাণশিল্পের অন্যতম উপকরণ রড। সম্প্রতি এ পণ্যের দাম বেশ ঘন ঘন ওঠানামা করছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, টানা কয়েকদিন বাড়তে বাড়তে গত সোমবার (২২ আগস্ট) কোম্পানির মানভেদে (৬০ গ্রেডের উপরে) খুচরায় প্রতি টন রড বিক্রি হয় ৯১ হাজার থেকে ৯৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।

এদিকে, আজ বুধবার (২৪ আগস্ট) রডের দাম আবার ৮৯ হাজার ৫০০ টাকায় নেমে এসেছে। দামের এমন ঘন ঘন ওঠানামায় এ পণ্যের বিক্রি কমে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর পুরান ঢাকার নয়াবাজার এলাকার নর্থ সাউথ রোডের পাইকারি মার্কেট ঘুরে কথা হয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। তারা জানান, রডের দাম নিয়মিত ওঠানামা করে। চট্টগ্রামের রড কোম্পানিগুলো যেদিন যে দাম বেঁধে দেয়, সে দামেই রড বিক্রি করতে হয়। ফলে রডের সঠিক ও স্থায়ী দাম বলা মুশকিল। গত এক বছরে রডের দাম বেড়েছে অন্তত দশ হাজার টাকা।

নর্থ সাউথ রোডের পাইকারি মার্কেট ঘুরে জানা গেছে, আজ (বুধবার) টনপ্রতি বিএসআরএমের ৫০০ ডব্লিউ রডের দাম ৯৪ হাজার টাকা, রহিম স্টিল ও বন্দর স্টিলের একই গ্রেডের রডের দাম ৯২ হাজার ৫০০ টাকা, স্কয়ার বিমের দাম ৯৭ হাজার টাকা।


 
অন্যদিকে, বিএসআরএমের আজকের মিল গেট দাম ৯৩ হাজার ৮৬০ টাকা। এ ছাড়া, অন্যান্য ব্রান্ডের টনপ্রতি এমএস ৬০ গ্রেড রডের দাম ৮৬ হাজার টাকা এবং ৪০ গ্রেড রডের দাম ৮৪ হাজার টাকা। পাতির দাম ৮২ হাজার টাকা এবং অ্যাঙ্গেল ৮৭ হাজার টাকা। রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতেও একই বা কাছাকাছি দামে রড বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত তিনদিন আগেও এমএস রডের দাম ছিল ৯০ হাজার টাকা। চট্টগ্রামের মিলগুলোর বেঁধে দেওয়া দামের বাইরে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরান ঢাকার এক রড ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নানা কারণে রডের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে অন্যতম জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি। তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে আমাদের পরিবহন খরচ বেড়েছে। ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে কাঁচামাল আমদানিতে খরচ বেড়ে গেছে মিলগুলোর। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের স্বল্পতায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। জাহাজে আমদানি কমে যাওয়ায় রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম বেড়েছে। সব মিলিয়ে এক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে মিলগুলোতে। যার ফলে দাম একটু বাড়তি।

তিনি আরও জানান, রডের দাম বাড়ছে বলে বিক্রি অনেকটা কমে গেছে। যেখানে আগে দিনে ৪০ থেকে ৫০ টন রড বিক্রি হত, সেখানে এখন রড বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টন। আর দাম যে হারে ওঠানামা করছে, তাতে করে প্রয়োজনের বেশি রড কিনে ধরে রাখার কোনো সুযোগ নেই। এতে লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি হবে।

স্থানীয় বাজার ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেছে। লালবাগ এলাকায় রড়ের বড় দোকান মদিনা ট্রেডিং করপোরেশন প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজার নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, এমএস ৬০ গ্রেডের রড ৯৩ হাজার ৫০০ থেকে ৯৪ হাজার টাকা এবং ৪০ গ্রেডের রড ৮৮ হাজার টাকায় খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বুধবার ২৪ আগস্টের বাজারদরে দেখা গেছে, ৬০ গ্রেডের এমএস রডের বাজারমূল্য প্রতিটন ৮২ হাজার থেকে ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা। গত সপ্তাহেও এ পণ্যের বাজারমূল্য ছিল ৭৯ হাজার থেকে ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা। এক মাস আগে এ রডের দাম ছিল ৮০ হাজার থেকে ৮৮ হাজার ২৫০ টাকা। এক বছর আগে দাম ছিল ৭৩ থেকে ৭৫ হাজার ৭০০ টাকা। সেই হিসাবে মাসিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। বার্ষিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

অন্যদিকে, ৪০ গ্রেডের এমএস রডের বাজারমূল্য ৭৭ হাজার থেকে ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা। গত সপ্তাহেও একই দাম ছিল এ রডের। এক মাস আগে এর দাম ছিল ৭৭ হাজার থেকে ৮১ হাজার ৫০০ টাকা। এক বছর আগে এ রডের দাম ছিল ৬৯ হাজার থেকে ৭১ হাজার ৫০০ টাকা। সে হিসাবে এ গ্রেডের রডের মাসিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং বার্ষিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

এমএইচএন