পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন বেড়েছে। তবে তা পরিবার চালানোর জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ শ্রমিকদের পরিবারের আয় বাড়ার চেয়ে খরচের পরিমাণ বেশি হারে বেড়েছে।

বুধবার (৩১ আগস্ট) ‘সাম্প্রতিক আরএম‌জি প্রবৃদ্ধি : উপযুক্ত কর্মসংস্থান সম্পর্কে আমরা কী শিক্ষা পেয়েছি’ শীর্ষক আলোচনায় উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন ক‌রে। যেখানে প্রধান অতিথি ছি‌লেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন বিজিএমইএ সহসভাপতি শ‌হিদুল্লাহ আজিম এবং বিকেএমইএ জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. হাতেমসহ এ খাতের শ্রমিক নেতা এবং শ্র‌মিক সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠা‌নে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

৫১টি পোশাক কারখানার ১২৪৪ জন শ্র‌মি‌কের ওপর প‌রিচা‌লিত এ জ‌রিপে ৬০ শতাংশ নারী ও ৪০ শতাংশ পুরুষ শ্র‌মিক অংশ নেন।

সি‌পি‌ডির প্র‌তি‌বেদ‌নে তথ্য অনুযায়ী, কারখানার একজন শ্রমিকের আয় আগের বছরের চেয়ে গড়ে ১২.৫০ শতাংশ বেড়েছে। তবে এটি পরিবার চালানোর জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ সি‌পি‌ডির জরিপ বলছে, একজন পোশাক শ্রমিকের পরিবারের আয় বেড়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ; একই সময় আগের চেয়ে খরচ বেড়েছে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ আয়ের তুলনায় খরচ অনেক বেশি বেড়েছে।

সি‌পি‌ডির প্র‌তি‌বেদ‌নে বলা হয়, করোনাকালীন সময়ে তৈ‌রি পোশাক খাতে উচ্চ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হ‌য়ে‌ছে। ত‌বে ওই সময় গড়ে ১৮ দশমিক ১ শতাংশ শ্রমিককে জোর করে কাজ করানো হয়েছে। যেখানে পুরুষ শ্রমিকদের সংখ্যা বেশি ছিল।

প্র‌তি‌বেদ‌নের তথ্য অনুযায়ী, ৪২ শতাংশ কারখানা কোনো নিয়মের মধ্যে নেই। ৪৫ শতাংশ কারখানা ভাড়ায় চলে। ২৫ শতাংশ কারখানার সার্টিফিকেট নেই।

জ‌রি‌পে উঠে এসে‌ছে প্রায় ৩০ শতাংশ পোশাক কারখানাকে কলকারখানা পরিদর্শন বিভাগের পরিদর্শকদের বাড়তি অর্থ ঘুষ হিসাবে দিতে হয়েছে, যা অবৈধ।

তৈরি পোশাক শিল্পের ক‌রোনার টিকার প্রস‌ঙ্গে প্র‌তি‌বেদ‌নে বলা হয়, ৭৪ দশ‌মিক ৩ শতাংশ শ্র‌মিক করোনার টিকার প্রথম ডোজ নি‌য়ে‌ছেন। দ্বিতীয় ডোজ নি‌য়েছেন মাত্র ২০ শতাংশ শ্র‌মিক। যা‌দের ওপর জ‌রিপ করা হয় তারা কেউ বুস্টার ডোজ নেন‌নি।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, পোশাক খাতে এখন প্রবৃদ্ধি টিকে থাকবে না কি নিচে নেমে যাবে এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। কেননা কোভিডে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ক্রেতাদের পোশাক না কেনার কারণে গ্রোথ নিচে নেমে গিয়েছিল।

ট্রেড ইউনিয়ন হওয়া উচিত জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মালিক-শ্রমিক বাইসাইকেলের চাকার মতো। তাই ট্রেড ইউনিয়নের শ্রমিকদের স্বার্থ যেমন দেখতে হবে তেমনি কারখানাও টিকিয়ে রাখার বিষয়টিও বুঝতে হবে। এক সাথে কাজ করতে হবে। কাউকে দোষারোপ নয়। জাতিসংঘের ন্যূনতম যে দিকনির্দেশনা আছে তা পূরণ করতে হবে। শ্রমিকদের জীবন মানও উন্নয়ন করা দরকার। তাই কমপ্লায়েন্স রক্ষা করতে হবে। পোশাক শ্রমিকদের সহায়তায় টিসিবির আওতায় নিত্যপণ্য সরবরাহ করার চিন্তা করা হচ্ছে। 

মালিক পক্ষ জানায়, দে‌শে ১ হাজার ১৩৪টি পোশাক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন আছে। আস‌লে কি ট্রেড ইউনিয়নে শ্রমিকদের কো‌নো উপকার হ‌চ্ছে এটা নি‌য়ে গ‌বেষণা করা দরকার? ট্রেড ইউনিয়নের কাজ শুধু আ‌ন্দোলন নয়, শ্র‌মিক মা‌লিকের ম‌ধ্যে সমন্বয় করা। কিন্তু আমা‌দের এখা‌নে তা হয় না। কারখানার শ্র‌মিকরা‌ নিজ উ‌দ্যো‌গে ট্রেড ইউ‌নিয়ন ক‌রেন না।‌ বা‌ইরের লোকজন এটা ক‌রে দি‌চ্ছে। 

কারখানায় নারী শ্র‌মিক ক‌মে যাওয়ার যু‌ক্তি হিসেবে মা‌লিক‌দের দা‌বি, যন্ত্রের ব্যবহার যত বাড়‌বে শ্রমিক তত কমবে। এখন মে‌শিন চালা‌তে হ‌লে দক্ষতার দরকার হয়। বে‌শিরভাগ নারী শ্র‌মিকের এ‌ক্ষেত্রে দক্ষতার অভাব র‌য়ে‌ছে। তাই নারী শ্র‌মিক ক‌মছে। নারী‌দের ধ‌রে রাখ‌তে হ‌লে দক্ষতা বাড়া‌তে হ‌বে।

ত‌বে শ্র‌মিক নেতারা জানান, এ পর্যন্ত যেসব শ্র‌মিক ট্রেড ইউনিয়নের উ‌দ্যোগ নি‌য়ে‌ছে তা‌দেরই চাক‌রি হারা‌তে হ‌য়ে‌ছে।

মাতৃত্বকালীন ছু‌টিতে বৈষম্যের অ‌ভি‌যোগ ক‌রে শ্র‌মিকরা জানান, সরকা‌রি অ‌ফি‌সে মাতৃত্বকালীন ছু‌টি ৬ মাস। এছাড়া কাগ‌জে কল‌মে মাতৃত্বকালীন ছু‌টির কথা থাক‌লেও তা বে‌শিরভাগ শ্র‌মিক পান না। অ‌নেক ক্ষে‌ত্রে মাতৃত্বকালীন ছু‌টি নয়, চাক‌রি ছে‌ড়ে দিতে হয়।

শ্র‌মিক নেতারা আ‌রও ব‌লেন, বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। শ্রমিকের জীবনে সংকট বাড়ছে। ৪ বছর আগে মজুরি বৃদ্ধি হয়েছে। মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে মজুরি বাড়ানোর কথা এখনো সরকার বিবেচনা করছে না। যত দ্রুত সম্ভব মজুরি বাড়ানো আবশ্যক হয়ে দাঁড়ি‌য়ে‌ছে।

এসআই/এসকেডি