দেশি ফ্রিজের একক আধিপত্য
মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলন
দেশে বর্তমান ফ্রিজ বাজারের প্রায় ৮০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার দেশীয় ব্র্যান্ডের দখলে। এর মধ্যে এককভাবে দেশি ব্র্যান্ড ওয়ালটনের দখলে ৬৬ শতাংশ। মার্সেল, সিঙ্গার, ভিশন ও মিনিস্টারসহ অন্যান্যদের দখলে ২৩ শতাংশ। বাকি ১১ শতাংশ বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে সিঙ্গার, স্যামসাং, শার্প ও এলজি উল্লেখযোগ্য।
সোমবার (১ মার্চ) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে আয়োজিত বাংলাদেশের ফ্রিজ শিল্পের ওপর গবেষণা প্রতিবেদন উন্মোচন শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়েছে মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশের (এমডব্লিউবি)।
বিজ্ঞাপন
গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও এমডব্লিউবির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ড. মো. নাজমুল হোসাইন। গবেষণাটি করেছেন- মার্কেটিং বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান ও এমডব্লিউবির সহপ্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল হোসাইন ও ড. রাফিউদ্দীন আহমদ এবং গবেষক সাখাওয়াত হোসেন।
২ হাজার ৪৪০ জন ফ্রিজ ব্যবহারীর ওপর মাঠ পর্যায় এবং অনলাইন জরিপ (মাঠপর্যায় ১৭৭৮, অনলাইন ৬৬২জন), ১০টি ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন, ১০টি রিটেইল স্টোর অডিট, ১০জন বিশেষজ্ঞের সমীক্ষা, ৩ হাজার ৮৬০টি অনলাইন ক্রেতার প্রতিক্রিয়া, ইলেকট্রনিক প্রোডাক্ট রিভিউয়ের মাধ্যমে ১৯৬টি পাবলিক পোস্ট বিশ্লেষণ এবং ৮টি প্রতিষ্ঠানের একটি টিভিসি বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষণাটি করা হয়।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রায় দুই দশক ধরে ফ্রিজের বাজার দ্রুত গতিতে বাড়ছে। এর ব্যবহারের হার শহরের চেয়ে গ্রাম ও উপ-শহরগুলোতে খুব বেশি হারে বাড়ছে। ফ্রিজ মার্কেট প্রবৃদ্ধির জন্য মধ্য ও উচ্চবিত্তের দ্রুত বিকাশ, ছোট পরিবার ও নারী কর্মজীবির সংখ্যা বৃদ্ধি, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে উপ-শহরীকরণ প্রক্রিয়া, কম খরচে দেশীয় ফ্রিজ কেনার সক্ষমতা এবং কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাবান্ধব শর্তাবলীর (কিস্তিতে ক্রয় ও ওয়ারেন্টি) কথাও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।
গবেষণার ফলে দেখা যায়, ২০১০ সাল পর্যন্ত ফ্রিজের বাজার বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো দ্বারা এককভাবে নিয়ন্ত্রিত ছিল এবং দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর মার্কেট শেয়ার ছিল খুবই নগণ্য। ২০১০ সাল থেকে ক্রমবর্ধমান হারে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো তাদের মার্কেট শেয়ার দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর কাছে হারাতে থাকে। এর ফলে বাংলাদেশকে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে বিদেশি ব্র্যান্ড কিনতে হয়নি। একই সঙ্গে শিল্পের বিকাশে বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়ে চলেছে। ২০১৫ থেকে ২০১৯- এ পাঁচ বছরে ফ্রিজ শিল্প গড়ে ১৩ শতাংশ+২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ফ্রিজের তিন ক্যাটাগরির পণ্যের ক্ষেত্রে এ প্রবৃদ্ধি হারের ব্যাপক তারতম্য আছে (যেমন ফ্রস্ট ফ্রিজের প্রবৃদ্ধি হার ১০ দশমিক ৫ শতাংশ, নন ফ্রস্ট ফ্রিজ ৪০ শতাংশ এবং চেস্ট ফ্রিজ ১১ শতাংশ)।
গবেষণায় ফ্রিজ ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ক্রেতা সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির মাত্রা যাচাই করা হয়। এতে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্রেতা দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর ওপর সন্তুষ্ট। বেশিরভাগ ক্রেতা মনে করেন, অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে তুলনামূলকভাবে ভালো মানের ফ্রিজ দেশীয় কোম্পানিগুলো বাজারে আনতে সক্ষম হয়েছে। ক্রেতারা ফ্রিজ কেনার ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী মূল্য, স্থায়িত্ব, বিদ্যুত সাশ্রয়, ডিজাইন, কম্প্রেসার, ওয়ারেন্টি, বিক্রয়োত্তর সেবা এবং অভিনব প্রযুক্তির ব্যবহারকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তবে ব্যবহারকারীদের কিছু বিষয়ে অভিযোও রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, স্বল্প শীতলীকরণ ক্ষমতা, ওয়াটার লিকেজ, কম্প্রেসারের উচ্চ শব্দ, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ, বেশি বরফ জমা, নির্দিষ্ট সময় পর পর কম্প্রেসারের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বলা হয়, দেশীয় কোম্পানীগুলো যে ধরনের বড় বিনিয়োগ করেছে এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে ফ্রিজের চাহিদা আরও বাড়বে এবং এক পর্যায়ে দেশীয় চাহিদা পূরণ করে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে। দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো যেন আরও ভাল করতে পারে তার জন্য সকল লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, প্রয়োজনে সরকার বিশেষ পলিসি গ্রহণ করে এ শিল্পের বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে। এতে যেমন অনেক বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় সাশ্রয় হবে, তেমনি দেশীয় কোম্পানিগুলো উপকৃত হবে।
আরএইচ