ডিপোজিট সংগ্রহের কথা বলে অগ্রিম কমিশন হিসেবেই ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ফাইন্যান্সের অপসারণকৃত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তুহিন রেজা।

প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে এক টাকাও সংগ্রহ হয়নি। অথচ টানা দুই বছরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কমিশনের টাকা উত্তোলন করে গেছেন তিনি। অবৈধ ও বেআইনি কমিশন বাণিজ্যের নামে ওই টাকা পুরোটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। শুধু তাই নয় দালিলিক সব তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে কমিশনে (দুদক) মামলার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের এক পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তুহিন রেজা মোট ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ব্যতিরেকে উন্নয়ন খাত দেখিয়ে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে একক কর্তৃত্বেই প্রতিষ্ঠান থেকে ওই টাকা ডিপোজিট সংগ্রহের জন্য অগ্রিম কমিশন হিসেবে উত্তোলন করলেও এর বিপরীতে এক টাকাও ডিপোজিট সংগ্রহ করতে পারেননি। অনুসন্ধানে এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাকি সিদ্ধান্ত কমিশন নেবে।

অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের অফিসিয়াল ডিপোজিট সংগ্রহের জন্য কমিশন হিসেবে বিভিন্ন সময়ে অগ্রিম হিসাবে ৫০ হাজার, ৫ লাখ, ৭ লাখ, ৮ থেকে ১৬ লাখ টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করা হয়েছে। ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি, ২, ১১, ১২ ও ১৯ মার্চ, ২ জুন ও ৩০ জুলাই এবং ২০২১ সালের ১৮ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১ মার্চ, ৯ মার্চ, ৪ এপ্রিল, ২১ মার্চ ও ২৫ মার্চ কমিশন হিসেবে ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়।

ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের ডিপোজিট সংগ্রহের জন্য কমিশন হিসেবে অগ্রিম টাকা উত্তোলনের জন্য প্রতিটি সার্ভিস রিকুয়েস্ট ফর্ম পূরণের পর হেড অব ট্রেজারি ও এসভিপি মোহাম্মদ সবুর খান দিপু অথরাইজড করেন। যা নিয়মিতভাবেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) হিসাবে অনুমোদন করেন মো: তুহিন রেজা। এক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি নেওয়া হয়নি।

এ কারণেই অনুসন্ধান প্রতিবেদনে ফাস্ট ফাইন্যান্সের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়া বেআইনি ভাবে কমিশন বাণিজ্যের নামে ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ অভিযোগ এনেছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা। যেখানে সংশ্লিষ্ট আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪০৯, ৪২০, ১০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ এনে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে।

২০২১ সালের ২৮ মার্চ ফার্স্ট ফাইন্যান্সের এমডি তুহিন রেজাকে অপসারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অনিয়ম করে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দুটি গুরুতর অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। একটি হলো, তুহিন রেজা ব্যক্তিগত সিআইবি তথ্য গোপন করেন। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ বিভাগে তার নথিতে সিআইবি সংযোজন করা হলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে তা সরিয়ে ফেলেন।

দ্বিতীয় অভিযোগ, কোনো বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই একক সিদ্ধান্তে ২২ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সার্ভিস রুলের ব্যত্যয় ঘটান।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর ফার্স্ট ফাইন্যান্সের এমডি ও সিইও (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে তুহিন রেজাকে পদায়ন করা হয়েছিল। পরে ২০২০ সালের ১১ মার্চ ৩১৯তম পর্ষদ সভায় তাকে এমডি নিয়োগ করা হয়। এই নিয়োগের বিষয়ে ওই বছরের ১২ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। ২৫ জুন তা নাকচ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে ২৮ জুন তুহিন রেজাকে এমডির বিষয়ে পুনরায় অনাপত্তি চায় ফার্স্ট ফাইন্যান্স। তাও নামঞ্জুর করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩ মার্চ তুহিন রেজার এমডি হিসেবে অনাপত্তির অনুমোদন চেয়ে আবেদন করে ফার্স্ট ফাইন্যান্সের পর্ষদ। কিন্তু তা নামঞ্জুর করে ওই বছরের ১৫ মার্চ চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই চিঠিতে দ্রুত নিয়মিত এমডি নিয়োগ দিতে পর্ষদের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

আরএম/এসকেডি