বাজারে আসতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি। প্রতি বছর এসময়টাতে বাজারে সবজির দাম কিছুটা কম থাকে। আর সে কারণেই মানুষ খাবারের তালিকায় সবজির পরিমাণটা একটু বেশিই রাখেন। শীতকালে বাঁধাকপি ও ফুলকপির দাম তুলনামূলক কিছুটা কম থাকায় ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি থাকে এই দুটি সবজিতেই।

তবে এবার শীতকালীন সবজি বাজারে ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম নিম্নআয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো বাজারে ৬০ টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা গেছে।

ফুলকপি ও বাঁধাকপির এমন দাম দেখে নিম্নআয়ের ক্রেতারা বলছেন, আকারে বাঁধাকপি ও ফুলকপি অন্য সব সবজির তুলনায় বড় হওয়ায় তারা এই দুটি সবজি বেশি কেনেন। কারণ একটি ফুলকপি বা বাঁধাকপি নিয়ে দুই বেলা খাওয়া যায়। তবে এবার যে দামে এই দুটি সবজি বিক্রি হচ্ছে তা তাদের নাগালের বাইরে।

আরও পড়ুন : বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট

এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, আগের বছরগুলোতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি তারা আরও কিছুটা কম দামে বিক্রি করেছেন। কিন্তু সব কিছুর দাম বাড়তি হওয়ায় এর প্রভাব সবজির বাজারেও পড়ছে। তাই এসব সবজি বেশি দামে কিনতে হয়, বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামেই।

শুক্রবার (১১ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর শাহাজাদপুর ও বাড্ডা কাঁচাবাজারে ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

শাহাজাদপুর কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা নির্মাণ শ্রমিক মো. খায়রুল বলেন, শীতকালে আমরা বাঁধাকপি ও ফুলকপি বেশি কিনি। মাছের লগে একটা ফুলকপি দিয়ে আমাগো দুই বেলা হয়ে যায়। কিন্তু ৫০ টাকা করে ফুলকপি বা বাঁধাকপি কেনার ক্ষমতা আমাগো নাই। ফুলকপি ও বাঁধাকপি এখন আমগো লাইগা না, বড়লোক গো লাইগা। ৫০ টাকা দিয়ে একটা ফুলকপি কিনলে মাছ, চাল ও অন্য বাজার কিনমু কেমনে।

জানতে চাইলে শাহাজাদপুর কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. খলিল বলেন, গত সপ্তাহে প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৭০-৮০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। এই সপ্তাহে দাম ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। শীতের শুরু বলে দাম একটু বেশি। তবে সব জিনিসেরই দাম বাড়ছে, এর প্রভাব সবজির বাজারেও রয়েছে। তাই শীতে যে খুব বেশি সবজির দাম কমবে সেটা আশা করা যায় না। আর বেশি দামে কিনে তো কম দামে বিক্রি করা যায় না।

খলিলের এমন কথা শুনে বাজার করতে আসা মো. আনোয়ার বলেন, হ আপনাগো তো মনে হইব দাম কমই। ৫০ টাকা দিয়ে একটা ফুলকপি কিনতে আমাগো কি অবস্থা হয় হেইটা তো আমরাই জানি। ৫০ টাকার ফুলকপি খাইতে এর লগে আরও ২০০ টাকার বাজার করতে হইব। এত টাকা আমরা কই পামু।

এদিকে বাজার ঘুরে দেখা যায়, শীতের অন্য সবজিতেও তেমন একটা স্বস্তি দেখা যায়নি ক্রেতাদের জন্য। কিছু সবজির দাম স্বাভাবিক থাকলেও কিছু সবজির দাম বাড়তি দেখা গেছে।

বাজারে প্রতি কেজি পটল ৫০ টাকা, বেগুন ৫০-৬০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, কাঁচামরিচ ৫০-৬০ টাকা, ধনিয়াপাতা ১০০ টাকা, আলু ২৮-৩০ টাকা, শিম ৬০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, উচ্ছে ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, শসা ৮০ টাকা ও চিচিঙ্গা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি আঁটি লাল শাক ও পালং শাক ১৫-২৫ টাকা করে ও প্রতি পিস লাউ ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শীতের সবজির দাম নিয়ে বাড্ডা কাঁচাবাজারের বিক্রেতা আব্দুল হালিম বলেন, শীতকাল মাত্র শুরু হয়েছে। বাজারেও শীতের সবজি আসতে শুরু করেছে মাত্র। এখন কিছুটা দাম বেশি থাকলেও মাসখানেক পর দাম আরও কমবে। তবে সবজির পাইকারি দাম নানা কারণে বেড়ে যাওয়ায় অন্য যেকোনো বারের তুলনায় এবার কিছুটা দাম বেশি।

এমএসি/এসএসএইচ