মাসব্যাপী মেলার শেষ দিন মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় মানুষের ঢল নেমেছে। সন্ধ্যায় মানুষের উপস্থিত এমন হয়েছে যে পা ফেলার জায়গা পর্যন্ত ছিল না। ফলে বিক্রিও হয়েছে কয়েকগুণ।

সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুরের পর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ এর আশপাশ এলাকা থেকে মেলা প্রাঙ্গণে মানুষের সমাগম ঘটতে থাকে। বিকেল শেষে সন্ধ্যায় দর্শনার্থীদের ভিড় রূপ নেয় জনসমুদ্রে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে।

মেলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবার মেলায় ৩৫ লাখ দর্শনার্থী এসেছে। এছাড়াও শেষ দিন পণ্যের অনেক ছাড় চলেছে। তাই শেষ বেলায় দর্শনার্থীরা এসে কম দামে পণ্য কিনেছেন।

কালীগঞ্জ থেকে তিন মেয়ে নিয়ে মেলায় আসা মেহেরুন্নেছা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুপুরে মেলায় এসেছি। এসে মেয়েদের নিয়ে মেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখছি। এরপর দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করেছি। মেয়েদের জন্য কেনাকাটা করেছি। এখন বাসায় ফিরছি।

মোট ৮ হাজার টাকার কেনাকাটা করেছেন বলেও জানান তিনি।

ক্লাসিক্যাল হোমটেক্সে ‘বেডশিট’ কিনতে আসা মারুফা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক সপ্তাহ আগে এসেছিলাম। দুটি চাদর আমার অনেক পছন্দের ছিল। তাই আজকে কিনতে আসলাম। চাদর তো পেলাম কিন্তু দোকানদারের সাথে কথা বলার চান্সও পাচ্ছি না। অনেক ভিড়।

ভিশন শোরুমের বিক্রয় কর্মী শওকত ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর মেলায় গত বছরের চেয়ে বিক্রি বেশি হয়েছে। বিশেষ করে আজকে বিক্রি অনেক বেড়েছে।

কত টাকা বিক্রি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বলতে পারবো না, স্যার জানেন।

পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার আমিনুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকে বিক্রি অনেক ভালো হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি।

টেস্টি ট্রিট প্যাভিলিয়ন ইনচার্জ সোহাগ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ ক্রেতাদের সাড়া পেয়েছি। আশা করছি যারা আমাদের খাবার খেয়েছেন তারা সব সময় খাবেন।

স্বামীর সাথে তার্কিশ প্যাভিলিয়নে পণ্য দেখতে আসা সুমাইয়া রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আলোকসজ্জার সঙ্গে ছবি তুলার জন্য ১০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছি। কিন্তু মানুষের ভিড়ের কারণে ছবি তুলতে পারছি না।

ব্লেজার, মুজিব কোট এবং কটির দোকান রায়হান ফ্যাশনেও দেখা গেছে উপচেপড়া ভিড়। এখানে ৬০০ টাকায় কটি, ৮০০ টাকা ছোটদের ব্লেজার বিক্রি হচ্ছে। আর বড়দের ব্লেজার বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১২০০ টাকায়। সেখানে বিশেষ অফারে ব্লেজার কেনার হিড়িক পড়েছে।

দোকানের কর্মচারী আদাসুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেখছেন তো চাহিদা বেশি। কাস্টমার সামলাতে পারছি না।

উল্লেখ্য, গত ১ জানুয়ারি মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাসব্যাপী মেলার শেষ দিন ছিল আজ। এটি ঢাকার ২৭তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা।

১৯৯৫ সাল থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন ও উৎপাদনে সহায়তার জন্য এ মেলার আয়োজন করা হয়। আগে বাণিজ্য মেলা রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হতো। ২০২২ সাল থেকে পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার প্রাঙ্গণ মেলার জন্য নির্ধারিত হয়েছে।

এবারের বাণিজ্য মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, নেপালসহ বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। মেলায় ১৭টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। 

এছাড়াও এবার দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি হলের বাইরে মিলে মোট ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন অংশ নিয়েছে। এর আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ২২৫টি।

এমআই/এমজে