বাজার প্রক্রিয়া ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। বাজারে কোনো ধরনের ম্যাকানিজম কাজ করছে না। তার চেয়ে জটিলতর যেটা হচ্ছে তা হলো বড়রা ছোটদের খেয়ে ফেলছে। বাজারের ভেতর ছোটদের প্রভাব ও অংশগ্রহণ ক্রমশ সীমিত থেকে সীমিততর হচ্ছে। বড়দের প্রভাব প্রতিপত্তি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বাড়ছে। এর ফলে বিশ্ববাজারে কমে যাওয়ার পরেও বাংলাদেশে অনেক পণ্যের দাম লাগাম ছাড়া।

সোমবার (২৭ মার্চ) গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা অনুষ্ঠানে এসব বক্তব্য উঠে আসে।

অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, গরুর মাংস, চিনি, সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারের তুলনায় অনেক বেশি। সবসময় বিশ্ববাজারকে দোষারোপ করা যায় না। কর কমিয়ে স্বস্তি দেওয়া যেতে পারে। বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা রয়েছে।

মাছ মাংস ছাড়া কম্প্রোমাইজ ডায়েটে ঢাকায় ৪ জনের পরিবারের খাদ্যের ওপর ব্যয় ৭ হাজার ১৩১ টাকা লাগছে জানিয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, সেখানে মাছ মাংস যুক্ত হলে ব্যয় তিনগুণ বেড়ে ২২ হাজার ৬৬৪ টাকায় দাঁড়ায়। শ্রমিকদের মিনিমাম আয় এর চেয়ে অনেক কম।

দেশের অর্থনৈতিক দুঃসময়ের কারণ হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধকে আর অজুহাত করার সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধকে সবসময় একটা কারণ হিসেবে বলে এসেছি। সেটা আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া, পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়া কিংবা অর্থনীতির ওপর বিভিন্ন চাপের ক্ষেত্রে বলেছি। সেটাকে আর একমাত্র অজুহাত বললে হবে না। অর্থনীতির ভেতরে থাকা দুর্বলতা ছিল সেগুলো মূল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধের ফল কিছুটা থাকলেও বাকিটা দেশের অর্থনীতির শক্তিমত্তার ওপর নির্ভর করছে।  

অন্যদিকে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাজার প্রক্রিয়া ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। বাজারে কোনো ধরনের ম্যাকানিজম কাজ করছে না। তার চেয়ে জটিলতর যেটা হচ্ছে তা হল বড়রা ছোটদের খেয়ে ফেলছে। বাজারের ভেতর ছোটদের প্রভাব ও অংশগ্রহণ ক্রমশ সীমিত থেকে সীমিততর হচ্ছে। 

গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, ঝড় ও ঝুঁকি আগের তুলনায় বেড়েছে। ঝড়ের আকার ও গভীরতা বেড়েছে। যে ঝড়কে আমরা সামাষ্টিক কিংবা ব্যষ্টিক পর্যায়ের ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করতাম, সেটি এখন ব্যক্তি পর্যন্ত বেড়ে গেছে। 

তিনি বলেন, সরকার এই প্রক্রিয়া থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে আইএমএফের লোন কিংবা শর্তাদির ওপর নির্ভরশীল থাকতে চাইছে। শুধুমাত্র আইএমএফের শর্ত ও সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ যথেষ্ট হবে না। আইএমএফের শর্তের বাইরেও বিবিধ রকমের কার্যক্রম নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

আগামী বাজেটে মূলস্ফীতির চাপের কথা মাথায় রেখে করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমানো, পোশাক ছাড়া অন্য রপ্তানি খাতে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া, সিগারেট-কোমল পানীয়তে কর বৃদ্ধি প্রভৃতি প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি।

আরএম/জেডএস