বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দেশে প্রতিবছর ভোজ্যতেলের চাহিদা গড়ে ২০ লাখ টন। সে হিসেবে মাসে চাহিদা প্রায় দেড় লাখ টন। তবে প্রত্যেক বছর রমজানে এ চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে তিন থেকে ৪ লাখ টনে। চলতি বছর এমনিতেই বাজারে ভোজ্যতেলের দাম চড়া। তার ওপর আসন্ন রমজানে চাহিদা বেড়ে গেলে দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, এখন পর্যন্ত দেশে ভোজ্যতেলের মজুত পর্যাপ্ত রয়েছে। তাছাড়া দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ট্রাকে করে ভোজ্যতেল বিক্রি শুরু হয়েছে, যা ক্রেতাদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে। তবে যদি আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ে, সেটার প্রভাব দেশের বাজারেও পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় আসন্ন রমজানে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছে মন্ত্রণালয়টি। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের মোট চাহিদার ৯০ শতাংশ ভোজ্যতেল আমদানিনির্ভর। গুরুত্বপূর্ণ এ ভোগ্যপণ্যের দাম নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর। আন্তর্জাতিক বাজারে যদি এ পণ্যটির দাম বাড়ে, তাহলে দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়ে।

এদিকে ভোজ্যতেলের বাড়তি দামে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতা। মো. ছুবুর আলী নামে এক ক্রেতা বলেন, গত বছর রমজানে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল কিনেছিলাম ১০৫ টাকা দরে। এ বছর কিনতে হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪২ টাকায়। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণেই এমনিতেই আয় কমে গেছে। তার ওপর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি চরম বিপাকে ফেলেছে।

রাজধানীর উত্তরা, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজারসহ একাধিক বাজার ঘুরে ছুবুর আলীর মতো একই প্রশ্ন রাখেন ভোক্তারা। ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে এতো বেশি দামে আর কখনও সয়াবিন তেল কিনে খেতে হয়নি ভোক্তাদের।

ক্যাব সূত্র জানায়, কয়েক বছর আগে বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৩৪ থেকে ১৩৫ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। এটাই ছিল সর্বোচ্চ দাম। বর্তমানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও ক্ষেত্রবিশেষ তা ১৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এতো বেশি দামে কখনও ভোজ্যতেল কিনে খেতে হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ এ ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি

তিনি বলেন, আসন্ন রমজান, আন্তর্জাতিক বাজারে কিছুটা দাম বৃদ্ধি ও দেশে গুটিকয়েক আমদানিকারকের কারণেই ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। আমদানিকারক কম থাকায় একটা সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। বাজারে যদি প্রতিযোগিতা বাড়ে তাহলে এখান থেকে মুক্তি মিলতে পারে। এছাড়া ভ্যাট এবং এআইটি কমাতে হবে। সবমিলিয়ে স্বার্থ দেখতে হবে ভোক্তার। ভোক্তারা যেন দ্রব্যমূল্য কিনতে বেকায়দায় না পড়েন।

কবে তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে এমন প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য পরামর্শক (দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল) মো. জিয়াউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, তেলের দাম সম্পূর্ণ নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর। সুতরাং এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে এখনই কিছু বলা যাবে না।

রমজান উপলক্ষে ভোজ্যতেলের যথেষ্ট মজুত আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আমদানি ও সরবরাহকারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। এখন পর্যন্ত সব ঠিক আছে। আশা করছি, আসন্ন রমজানে কোনো সমস্যা হবে না।

উল্লেখ্য, ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দাম পুনর্নির্ধারণ করে দেয় সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম মিল গেটে ১২৭ টাকা, ডিলার পর্যায়ে ১৩১ এবং খুচরায় ১৩৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ৫ লিটারের বোতল মিল গেটে ৬২০ টাকা, ডিলার পর্যায়ে ৬৪০ ও খুচরা পর্যায়ে ৬৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। একইসঙ্গে প্রতি লিটার খোলা পাম ওয়েলের দাম মিল গেটে ১০৪ টাকা, ডিলার পর্যায়ে ১০৬ ও খুচরায় ১০৯ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়। যদিও বেঁধে দেওয়া এ দামে তেল বিক্রি হচ্ছে না বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।

মহাখালী এলাকার বাসিন্দা আবদুল ওসমান আলী জানান, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেও যদি বাজারে তেল বিক্রি হতো, তাতেও ক্রেতা সন্তুষ্ট থাকতেন। কিন্তু সেটাও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।

দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারি পদক্ষেপ

ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে ও ভোক্তাদের কাছে সহজলভ্য করতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করেছেন সংস্থাটির তথ্য কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির পক্ষ থেকে ট্রাকে ৯০ টাকা লিটারে তেল বিক্রি শুরু হয়েছে। টিসিবির পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। সুতরাং ভোক্তারা হতাশ না হয়ে টিসিবির ট্রাক থেকে তেল কিনে চাহিদা মেটাতে পারবেন।

একে/এসকেডি/এমএমজে