দোকানদাররা দোকানের বাইরের গেট বন্ধ করে রাখছেন

অসহনীয় গরম থেকে রক্ষা পেতে এসি কিনতে দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। গত এক সপ্তাহ ধরে চলা দাবদাহের কারণে এসির পাশাপাশি এয়ার-কুলার, চার্জিং ফ্যানের চাহিদাও বেড়েছে। চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে এসির দামও। তারপরও দোকানে মিলছে না এসি।

ক্রেতার চাপ সামাল দিতে দোকানদাররা দোকানের বাইরের গেট বন্ধ করে রাখছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পরিচিত ব্যক্তি কিংবা কাস্টমার এলেই তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। 

এসি বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম থাকায় বাধ্য হয়ে দোকানের বাইরের গেট বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন >> ঈশ্বরদীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, কমেছে ঢাকায়

রাজধানীর পল্টন এবং বায়তুল মোকাররমসহ বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বেশিরভাগ দোকানের বাইরের গেট বন্ধ রয়েছে। যেগুলো খোলা রয়েছে সেগুলোতে রয়েছে ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড়। আবার দোকানগুলোতে ১ থেকে ২ টনের এসি নেই। ক্রেতারাও দোকানগুলোতে গিয়ে এসি না পেয়ে খালি হাতে ফিরছেন। তবে আড়াই, তিন টন কিংবা তার চেয়ে বেশি ক্ষমতার এসি পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় এসব এসির ক্রেতা কম। 

রাজধানীর মুগদা এলাকা থেকে বায়তুল মোকাররম মার্কেটে মেয়েকে নিয়ে ২ টনের এসি কিনতে এসেছেন আয়েশা আক্তার শারমিন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানিকনগর এলাকার কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখেছি, সেখানে এসি পাইনি। তারা বললো, বায়তুল মোকাররমে আসতে, এখানে এসেও দেখছি ১ থেকে ২ টনের এসি নেই। যেগুলো আছে সেগুলোর দামও বলছে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা বেশি। বাসায় বাচ্চা আছে, সে গরম সহ্য করতে পারছে না। তাই বাচ্চার জন্য হলেও এসি নিয়ে যেতে হবে। 

তিনি বলেন, একটি কোম্পানির ডিলারের কাছে গিয়েছিলাম, কর্মচারীরা জানাল ১ টন, দেড় টনের কোনো এসি গতকাল থেকে তাদের দোকানে নেই। আসবে কি না তাও বলতে পারছে না।

তোশিবা ব্র্যান্ডের এসির বিক্রেতা মনির আহাম্মদ খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত এক মাসে যে সংখ্যক বিক্রি করেছি, গত দুই দিনে তার চেয়ে বেশি বিক্রি করেছি এসি ও এয়ার কুলার।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে আগের যে এসিগুলো ছিল তা বিক্রি করে দিয়েছি। কিন্তু আজ থেকে অর্ডার দিয়ে এসি পাচ্ছি না। কাস্টমার এসে ঘুরে যাচ্ছে, এসি পাচ্ছে না।  

নাম না প্রকাশ শর্তে ম্যাক্সওয়েল ইলেকট্রনিক্স নামে মার্কেটের একটি দোকানের এক কর্মকর্তা বলেন, কাস্টমারের চাহিদা মেটাতে না পেরে গেট বন্ধ করে দিয়েছি। দোকানে এসিই নেই। কাস্টমাররা এসে এসি আছে কি না, দাম কত জিজ্ঞেস করছে।

অন্যদিকে পল্টনের ইলেকট্রো মার্ট লিমিটেডের গ্রি এয়ার কন্ডিশনার অ্যান্ড ফ্রাইড পণ্য বিক্রির দোকানে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেহাল অবস্থা। ক্রেতাদের চাপে তাদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। একের পর এক কাস্টমার আসছেন, দোকানদার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন তারা সেই দামেই এসিসহ অন্যান্য পণ্য কিনে নিচ্ছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশের বাজারের একটি বড় অংশ দখল করে রেখেছে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের এসি। তিন-চারদিন আগে ওয়ালটনের এক টনের নন-ইনভার্টার এসির দাম ছিল ৪১ হাজার ৯০০ টাকা। সেই এসি এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ হাজার টাকায়। ইনভার্টার ১ টনের এসি বিক্রি হয়েছিল ৬২ হাজার ৯০০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫ হাজার টাকায়। দেড় টন ৭২ হাজার টাকা।

গ্রি ব্র্যান্ডের ইনভার্টার ১ টনের এসি বিক্রি হচ্ছে ৫৮ হাজার ৪০০ টাকায়, দেড় টনের এসি বিক্রি হচ্ছে ৭৮ হাজার ৩৯০ টাকায়।

ট্রান্সটেক ব্র্যান্ডের ইনভার্টার ১ টনের এসির দাম ৫৯ হাজার ৭০৮ টাকা, দেড় টনের এসি বিক্রি হচ্ছে ৭৯ হাজার ৯৪৮ টাকায় এবং দুই টনের এসি বিক্রি হচ্ছে ৯৩ হাজার ২৮৮ টাকায়।

মিনিস্টার ব্র্যান্ডের দেড় টনের ইনভার্টার এসি বিক্রি হচ্ছে ৭২ হাজার ৯০০ টাকা, ২ টনের ইনভার্টার এসি বিক্রি হচ্ছে ৮০ হাজার ৯০০ টাকায়।

যমুনা ব্র্যান্ডের ১ টনের এসি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ হাজার ৭২০ টাকায়, ২ টন ৭৮ হাজার ১২০ টাকায় এবং দেড় টন ৬৫ হাজার ৫২০ টাকায়।

ভিশন ব্র্যান্ডের ১ টনের এসি বিক্রি হচ্ছে ৩৯ হাজার ৫১০ টাকায়, দেড় টনের ৫৯ হাজার ৩১০ টাকায় এবং ২ টনের ৭৩ হাজার ৭১০ টাকায়।

স্যামসাং ব্র্যান্ডের ইনভার্টার ১ টনের এসির বিক্রি হচ্ছে ৭৩ হাজার ৯০০ টাকায়, দেড় টনের ৯৫ হাজার ৯০০ টাকায় এবং দুই টনের এসি বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৭৯০০ হাজার টাকায়।

ওয়ার্লপুল ব্র্যান্ডের ইনভার্টার ১ টনের এসির দাম ৭৫ হাজার ৬৩০ টাকা, দেড় টনের দাম ৯৪ হাজার ৭৪৩ টাকা।

হিটাচি ব্র্যান্ডের দেড় টনের ইনভার্টার এসির দাম ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০ টাকায়, দুই টনের এসি বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৫০ টাকায়।

এছাড়াও ইনভার্টার ১ টনের এসি বিক্রি হচ্ছে ৮১ হাজার ৪০০ টাকায়, দেড় টন ১ লাখ ১৫ হাজার ৯০০ টাকায়।

এমআই/জেডএস