সাড়ে ৪ ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে গেল হাজার লিটার তেল
টিসিবির ট্রাক থেকে তেল, চিনি ও ডাল কিনতে ভিড় জমান ক্রেতারা/ ছবি: ঢাকা পোস্ট
‘দুপুর আড়াইটায় এসে দাঁড়িয়েছি। এখন বিকেল ৩টা ৫ মিনিট। এখনও তেল কিনতে পারিনি। আরও সময় লাগবে। যে লম্বা লাইন, এখানে দাঁড়িয়ে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পক্ষ থেকে বিক্রি করা সয়াবিন তেল কেনা সোনার হরিণের মতো।’
আক্ষেপের সুরেই কথাগুলো বলছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আবু সাঈদ। তিনি রাজধানীর মতিঝিলের হোটেল পূর্বাণী ইন্টারন্যাশনালের সামনে টিসিবির ট্রাকে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি হওয়া পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা পোস্টকে আবু সাঈদ বলেন, ‘রান্নার জন্য তেল প্রতিদিনই লাগে। এখান থেকে (টিসিবির ট্রাক) চার লিটার তেল কেনা মানে, বাজারের থেকে ২০০ টাকা কম। তাই কষ্ট ও সময় লাগলেও লাইনে দাঁড়িয়েছি। এখানে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে, সয়াবিন তেল পাওয়াটা সোনার হরিণ।’
পূর্বাণী হোটেলের সামনে টিসিবির পণ্য সকাল সাড়ে ১০টায় বিক্রি শুরু হয়। এ ট্রাকে আজ বিক্রির জন্য আনা হয়েছিল এক হাজার লিটার তেল, এক হাজার কেজি চিনি ও ৬০০ কেজি মসুর ডাল। এর মধ্যে ৩টা বাজার আগেই শেষ হয়ে গেছে তেল ও ডাল। সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে এক হাজার লিটার তেল কিনে নিয়ে যান ক্রেতারা। একইসময়ে শেষ হয়ে যায় ৬০০ কেজি ডাল বিক্রিও।
বিজ্ঞাপন
মতিঝিল এলাকার হোটেল পূর্বাণীর সামনে টিসিবির পণ্য বিক্রেতা শাহেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টায় বিক্রি শুরু করেছি। ভালো বিক্রি হচ্ছে। আজকে এক হাজার লিটার তেল, এক হাজার কেজি চিনি ও ৬০০ কেজি মসুর ডাল এনেছি। বিকেল সাড়ে ৩টা বাজে, ডাল-তেল বিক্রি শেষ, ৪টার মধ্যে চিনিও বিক্রি হয়ে যাবে। আমাদের বরাদ্দ যতটুকু দেওয়া হয়, ততটুকুই আনি। এখন বাজারে তেল-চিনির দাম বেশি হওয়ায় টিসিবির পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে।’
লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির ট্রাক থেকে তেল ও চিনি কিনেছেন সাইফুল নামে আরেকজন। তিনি বলেন, ‘বাজারে এক লিটার তেল কিনতে ১৪০ টাকা লাগে। এখান থেকে দুই লিটার কিনলাম ১৮০ টাকা দিয়ে। কিছুক্ষণ লাইন ধরলেও এখানে দুই লিটার ১০০ টাকা কম দামে পেয়েছি। চিনি কিনলাম ৫০ টাকা করে যা বাজারে ৭০ টাকা।’
এ ক্রেতা আরও বলেন, ‘টিসিবির পণ্য সব জায়গায় পাওয়া যায় না। যেসব জায়গায় পাওয়া যায় তাও সীমিত। এখানে লাইনে যারা দাঁড়িয়েছে, শেষের অনেকে পণ্য পাবেন না। আমরা নিম্নআয়ের মানুষ, বাজারে যে হারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, ন্যায্যমূল্যের পণ্য ছাড়া আমাদের গতি নেই। তাই আমরা চাই, সব এলাকায় ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করা হোক। এতে করে আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাবেন। পাশাপাশি যারা অধিক মুনাফার লোভে লাগামহীন পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন, তারাও কিছুটা চাপে পড়বেন।’
বিশ্ব বাজারে দাম বেড়েছে, এমন অজুহাত দেখিয়ে দেশের বাজারে দফায় দফায় বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা দিনে ৫০ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ চার কেজি চিনি, ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ দুই কেজি মসুর ডাল, ৯০ টাকা দরে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল এবং ৩০ টাকা দরে পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বরাবরের মতো এবারও রমজান উপলক্ষে আগে থেকেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে টিসিবি। ইতোমধ্যে রমজান পূর্ব বিক্রয় ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন ৪০০ ট্রাকের মাধ্যমে তেল, চিনি, মসুর ডাল ও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। রোববার (২১ মার্চ) থেকে বিক্রি দ্বিগুণ বাড়িয়ে প্রতি ট্রাকে এক হাজার লিটার তেল এক হাজার কেজি চিনি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। রোজায় নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগামী ৬ মে পর্যন্ত সারাদেশে ধারাবাহিক এ বিক্রি কার্যক্রম চলবে।’
বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার কোম্পানিভেদে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, পাঁচ লিটারের দাম ৬২০ থেকে ৬৬০ টাকা। প্রতি কেজি খুচরা লুজ সয়াবিন তেল কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩২ থেকে ১৩৫ টাকা, আর পাম ওয়েল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কখনও তেলের দাম এত হয়নি।
এসআই/এফআর/এমএমজে