চলছে ‘ফলের রাজা’ আমের ভরা মৌসুম। চারিদিকে পাকা আমের মৌ মৌ গন্ধ। আমের ‘রাজধানী’ চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীবাসীকে সেই আমের ‘ঘ্রাণ ও স্বাদ’ নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো। কুরিয়ার সার্ভিসের কল্যাণে বাগান থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্রেতার হাতে পৌঁছে যাচ্ছে রসালো ও সুমিষ্ট সব আম।

আর ক্রেতার হাতে দ্রুত ও ঝামেলামুক্তভাবে আমগুলো পৌঁছে দিতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস, ইউএসবি এক্সপ্রেসের মতো বড় কুরিয়ার সার্ভিসগুলো।

বুধবার (৩১ মে) রাজধানীর বেশ কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিসের শাখা ঘুরে ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুম হওয়ায় অন্যান্য পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি বিশেষভাবে আমসহ অন্যান্য ফল পরিবহনে জোর দিয়েছে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো। চাহিদা বেশি থাকায় নিজস্ব পরিবহনের পাশাপাশি ভাড়া করা ট্রাকেও আম পরিবহন করছে তারা। প্রতি রাতেই শীর্ষ কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর অন্তত ৩০ ট্রাক, এছাড়া অল্প পরিচিত কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর ৮ থেকে ১০ ট্রাক আম নিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করছে।

রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড এলাকায় সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেড একটি বড় ডেলিভারি পয়েন্ট তৈরি করেছে। যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় আসা শুধু ফলগুলো ডেলিভারি দেওয়া হয়। 

ওই ডেলিভারি পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, নিচে পণ্য নিয়ে আসা তাদের ট্রাকের সারি। দ্বিতীয়তলায় সুবিশাল ফ্লোরজুড়ে ক্যারেট ভর্তি আম-লিচু রাখা আছে ডেলিভারির জন্য। আম-লিচু সংগ্রহ করতে কিছুক্ষণ পরপরই লোকজন আসছেন ডেলিভারি স্লিপ নিয়ে।

ডেলিভারি নিতে আসা এসকেএম আরিফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দিনাজপুর থেকে এক খাঁচা লিচু আনালাম সুন্দরবন কুরিয়ারের মাধ্যমে। শুধু বিক্রেতাকে গতকাল টাকা দিয়ে কনফার্ম করেছি। রাতেই পাঠিয়েছে, সকালেই পেয়ে গেলাম। সুন্দরবনের সার্ভিসও ভালো। কুরিয়ার সার্ভিসের যুগে ফল পরিবহন অনেক সহজ হয়েছে।

ওই ডেলিভারি পয়েন্টের এক কর্মী জানান, ঢাকা সিটিতে সারাদেশ থেকে যেসব ফল আসে সেটার প্রধান হাব উত্তরার কামারপাড়ায়। সবার আগে সেখানে আসে, তারপর ঢাকা সিটিতে বিতরণ হয়।

উত্তরার কামারপাড়ায় অবস্থিত সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস হাবের ম্যানেজার রঞ্জু আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এখানে প্রচুর পরিমাণ ফল আসছে। বর্তমানে প্রতিদিন অন্তত ৩০-৩৫ গাড়ি আমই আসে, অন্যান্য পণ্য তো আছেই। আম পরিবহনের জন্য আমরা আলাদা ব্যবস্থা নিয়েছি। সিজন থাকা পর্যন্ত বিশেষ ব্যবস্থায় ফল পরিবহন হবে।

ইউএসবি এক্সপ্রেসের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার জুয়েল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফল পরিবহনের জন্য আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। এর জন্য আমাদের ব্র্যান্ডের ৩২টি ট্রাক ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রয়োজনে ট্রাকের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।

ঢাকাতে আমাদের ৩২টি ব্রাঞ্চ আছে যেখান থেকে আম নিয়মিত বুকিং ও ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সওদাগর এক্সপ্রেস কুরিয়ার সার্ভিসের তেজগাঁও ব্রাঞ্চের ইনচার্জ ইয়াসিন আলী শুভ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী থেকে ২০ ট্রাক আম আমাদের এখানে প্রতিদিন আসে। পুরো মৌসুমজুড়েই এমন আম আসতে থাকবে।

জানা গেছে, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জুনের মাঝামাঝি সময়ে পাকে আগাম জাতের আম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বৃন্দাবনী, গুলাবখাশ, রানীপছন্দ, হিমসাগর, ক্ষীরশাপাত ও বারি-১। জুনের মাঝামাঝি থেকে পাকতে শুরু করে ল্যাংড়া, হাঁড়িভাঙা, লক্ষণভোগ, খুদিক্ষীরশা, বারি-২, বোম্বাই, সুর্যপুরী। জুলাই মাস থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পাকে নাবিজাতের আম। এর মধ্যে রয়েছে ফজলি, আম্রপালি, মোহনভোগ, আশ্বিনা, গৌড়মতি, বারি-৩, বারি-৪।

এমএইচএন/এসকেডি