দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড ওয়ালটন উন্মোচন করেছে এআইওটি বেইজড স্মার্ট ফ্রিজ জায়ান্টেক। নতুন সিরিজের এই ফ্রিজটির মাধ্যমে হাই-টেক রেফ্রিজারেটর উৎপাদন ও বিপণনের নতুন যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ।

নতুন এ সিরিজের মধ্যে রয়েছে ৬১৯ লিটারের জিটি, ৬৪৬ লিটারের জিটি প্রো ও ৬৬০ লিটারের জিটি প্রো ম্যাক্স। গ্রাহকরা স্মার্টফোনে ওয়ালটন স্মার্ট অ্যাপ্লায়েন্সের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে ফ্রিজটি পরিচালনা করতে পারবেন।

বুধবার (৭ জুন) রাজধানীর বসুন্ধরায় ওয়ালটন করপোরেট অফিসে আয়োজিত এক লঞ্চিং ইভেন্টের মাধ্যমে নতুন সিরিজের ফ্রিজটি উন্মোচন করা হয়। 

বক্তব্যে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ম্যানেজিং ডিরেক্টর গোলাম মুর্শেদ বলেন, জায়ান্টেক সিরিজের ফ্রিজের মডেল ডেভলপমেন্টের জন্য ইউরোপ, আমেরিকা, কোরিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বহুদেশের ফ্রিজ এক্সপার্টসদের নিয়ে কাজ করেছি। বাংলাদেশে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন (আরঅ্যান্ডআই) সেন্টার ও প্রকৌশলী টিম গঠনে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে ওয়ালটন। ওয়ালটনের শক্তিশালী আরঅ্যান্ডআই এর দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীসহ প্রোডাকশন, কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্টসহ সব বিভাগের সদস্যরা গত পাঁচ বছর ধরে জায়ান্টেক সিরিজ ফ্রিজের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচার নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। এরই প্রতিফলন হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ফোর-ডোর ফ্রিজ উৎপাদনকারী দেশের মর্যাদা লাভ করলো বাংলাদেশ। একইসঙ্গে বিশ্বের প্রথম 8in1 কনভার্টিবল সাইড বাই সাইড রেফ্রিজারেটর উৎপাদন ও বাজারজাতকারী দেশে বাংলাদেশের আবির্ভাব হলো। এর মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ফ্রিজ উৎপাদনকারী দেশে বাংলাদেশের রূপান্তর ঘটলো। আমাদের এ ধরনের উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

ওয়ালটন ফ্রিজের সিবিও তোফায়েল আহমেদ বলেন, জায়ান্টেক সিরিজের রেফ্রিজারেটরে ব্যবহৃত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচার। বিশ্বের সব আধুনিক দেশগুলোর বেঞ্চমার্ক উপযোগী করে জায়ান্টেক সিরিজের রেফ্রিজারেটরগুলো তৈরি করা হয়েছে। এসব ফ্রিজে গ্রাহকেরা স্মার্ট সব প্রযুক্তি ও ফিচার পাবেন।

ওয়ালটনের চিফ টেকনিক্যাল অফিসার ইয়ুন মগ ইয়াং বলেন, জায়ান্টেক সিরিজের ফ্রিজে ব্যবহৃত হয়েছে থ্রি-ডি এমএসও ইনভার্টার টেকনোলজি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট বেজড এই প্রযুক্তি এনভায়রনমেন্ট টেম্পারেচারের থ্রিডি ডাটা সংগ্রহের পাশাপাশি দরজা খোলা অবস্থায় ও ফ্রিজ কম্পার্টমেন্টের সঠিক টেম্পারেচার অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফ্রিজের তাপমাত্রা সেট করে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ খরচে সর্বোচ্চ কুলিং পারফরমেন্স নিশ্চিত করবে। এতে বিদ্যুৎ খরচ হবে অনেক কম।

ওয়ালটন রেফ্রিজারেটরের ডিজাইন অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ইতসুরো সুজুকি জানান, নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোকরশ্মির মাধ্যমে ওয়ালটন ফ্রিজে সংরক্ষিত ফলমূল ও শাক-সবজি প্রকৃতির মতো সজীব রাখে। ফলে ওয়ালটন ফ্রিজে সংরক্ষিত ফল ও সবজির ভিটামিন, মিনারেলসহ অন্যান্য খাদ্যগুণ ও পুষ্টি অক্ষুণ্ণ থাকে। এসব ফ্রিজের ইউডিসি টেকনোলজি বায়ুবাহিত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে ফ্রিজে রাখা খাবারকে সুরক্ষিত রাখে। ইন্টেলিজেন্ট জার্ম টার্মিনেটর টেকনোলজি বায়ুবাহিত জীবাণু ধ্বংস করে। থ্রি-লেয়ার ওডোর সেফ গার্ড অনাকাঙ্ক্ষিত গন্ধ দূর করে খাবারের স্বাদ রাখে অটুট। স্মার্ট কন্ট্রোল ফিচার থাকায় ওপরের দরজায় হাতের স্পর্শের মাধ্যমেই ফ্রিজ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এজন্য ফ্রিজের দরজা খোলার প্রয়োজন পড়ে না।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর শোয়েব। হোসেন নোবেল, ওয়ালটন প্লাজার চিফ এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মোহাম্মদ রায়হান, ওয়ালটন হাই-টেকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর নজরুল ইসলাম সরকার, এমদাদুল হক সরকার, মো. হুমায়ুন কবীর ও মো. ইউসুফ আলী, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এস এম জাহিদ হাসান, আমিন খান, দিদারুল আলম খান (চিফ মার্কেটিং অফিসার), তোফায়েল আহমেদ (ওয়ালটন ফ্রিজের চিফ বিজনেস অফিসার), মো. ফিরোজ আলম, আজমল ফেরদৌস (হেড অব রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার), আনিসুর রহমান মল্লিক, মো. শাহজাদা সেলিম (ইনচার্জ পিআর, মিডিয়া অ্যান্ড ব্র্যান্ডিং) প্রমুখ। দ্যা অ্যান্ড লঞ্চিং প্রোগ্রাম সঞ্চালনা করেন চিত্রনায়ক আমিন খান।

রেফ্রিজারেটগুলোর বিশেষ ফিচারের মধ্যে রয়েছে আয়োনাইজার, অজোনাইজার ও ইউভি ফিচার সমৃদ্ধ ইন্টেলিজেন্ট জার্ম টার্মিনেটর (আইজিটি), ইলোকট্রনিক কন্ট্রোল ফিচার, ডোর ওপেনিং অ্যালার্ম, চাইল্ড লক, থ্রি লেয়ার ওডোর গার্ড, হিউম্যান ডিটেক্টর, ফিঙ্গার প্রিন্ট রেসিস্ট্যান্ট মেটাল ডোর, ইন্টার্নাল অটোমেটিক আইস মেকার, সিরামিক কোডেট প্রিমিয়াম গ্লাস এবং এলিগ্যান্ট কার্ভড ডিজাইন মেটাল ডোর ইত্যাদি।

৬১৯ লিটার থেকে ৬৬০ লিটার ধারণক্ষমতার ওয়ালটনের জিটি সিরিজের রেফ্রিজারেটরগুলো বাজারে আসবে চলতি মাসেই। এই মডেলগুলোর দাম পড়বে ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে।

ওয়ালটনের এসব ফ্রিজে ১ বছরের রিপ্লেসমেন্টসহ কম্প্রেসরে ১২ বছরের গ্যারান্টি এবং ৫ বছরের ফ্রি বিক্রয়োত্তর সেবার সুবিধা পাবেন ক্রেতারা। এছাড়া রয়েছে আইএসও সনদপ্রাপ্ত দেশব্যাপী বিস্তৃত ৭৯টি সার্ভিস সেন্টার থেকে দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়ার নিশ্চয়তা।

ওএফএ/জেডএস