রাজধানীতে প্যাকেটজাত চিনির দেখা মিলছে না। খোলা চিনির দেখা মিললেও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি। অভিযোগ উঠেছে, ব্যবসায়ীরা চিনির দাম ইচ্ছেমতো বাড়ালেও বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না সরকার কিংবা বাজার মনিটরিং টিম।

বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দোকানগুলোতে প্যাকেটজাত চিনি নেই। খোলা চিনি রয়েছে। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। অর্থাৎ কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি।

গত মাসের ১০ তারিখে খোলা চিনির মূল্য ১২০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। কিন্তু একমাস পরও নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুন- পেঁয়াজের দাম নেমেছে অর্ধেকে, এবার বাড়ছে চিনির দাম

দাম বেশি নেওয়ার কথা স্বীকার করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। জানতে চাইলে মেরুল বাড্ডার মিজান জেনারেল স্টোরের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, প্যাকেটজাত চিনি এখন চোখেই দেখি না। কোম্পানির কাছে চাইতে চাইতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তিন থেকে চার মাস ধরে কোম্পানি প্যাকেটজাত চিনি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তাই আমরা এখন আর এই চিনি বিক্রি করছি না।

খোলা চিনি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন জানিয়ে তিনি বলেন, এক কেজি চিনি আমার কেনাই পড়ে ১৩৫ টাকা। আমি সরকার নির্ধারিত দরে কীভাবে বিক্রি করব! কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা লাভে বিক্রি করি।

একই ধরনের কথা বললেন মধ্য বাড্ডার আরেক ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্যাকজাত চিনি বিক্রি করি না। খোলা চিনি বিক্রি করছি ১৫০ টাকা কেজিতে।

সরকারের বাজার মনিটরিং প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, রাজধানীতে খোলা চিনি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ কিংবা দুই সপ্তাহ নয়, এক মাস আগেও রাজধানীতে একই দরে খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে। তবে এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২২ সালের ৮ জুন রাজধানীতে চিনি বিক্রি হয়েছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি। সেই হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে কেজি প্রতি চিনির দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।।

আরও পড়ুন- অতিরিক্ত দামে চিনি বিক্রি হলে অ্যাকশনে যাব : বাণিজ্যমন্ত্রী

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যবসায়ীরা কখনো ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে না। তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দিনের পর দিন চিনি নিয়ে খেলছে। সরকারের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।

এদিকে চিনির বাজারের এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। শান্তিনগর বাজারে আসা ক্রেতা ছায়েদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পেঁয়াজ, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় আজ সাধারণ মানুষের নিঃশ্বাস যায় যায় অবস্থা।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে আসা ক্রেতা মশিউর রহমান বলেন, চিনির দাম বাড়ানোর সময় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন- নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি না করলে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যবসায়ীরা সঠিক দামে চিনি বিক্রি করছে কি না অভিযান চালিয়ে তা দেখা হবে। কিন্তু, আজ পর্যন্ত কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

ক্ষুব্ধ মশিউর রহমান আরও বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। দোকানদারদের যখন বলি মন্ত্রী চিনির দাম নির্ধারণ করেছেন ১২০ টাকা কেজি, আপনি বেশি দামে বিক্রি করছেন কেন? দোকানদার বলেন, মন্ত্রীর কাছে যান। সেখান থেকে চিনি নিয়ে আসেন, আমার কাছে আসছেন কেন?

বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে এ ক্রেতা বলেন, চিনির দাম বারবার বাড়িয়ে সিন্ডিকেট ও মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের সহায়তা করছেন মন্ত্রী।

আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমবর্ধমান মূল্যের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১০ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেশের বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ১৬ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা নির্ধারণ করে। যা আগে ছিল ১০৪ টাকা। আর প্যাকেটজাত পরিশোধিত চিনির দাম কেজি প্রতি ১০৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২৫ টাকা করা হয়।

এমআই/এমজে