আগে যা পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল তার চেয়ে পাঁচ বছর আগেই, অর্থাৎ ২০২৮ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে চীন। করোনার অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলানোয় চীনের চেয়ে পিছিয়ে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। আর এ কারণেই আগে যে সময়ের কথা বলা হয়েছিল তার আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে যাবে চীন।   

দ্য সেন্টার ফর ইকোনোমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) নামে একটি থিঙ্ক ট্যাংক তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে এভাবেই ভবিষ্যত অর্থনীতির হালচাল তুলে ধরেছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশকিছু সময় ধরেই বিশ্ব অর্থনীতির আলোচ্য বিষয়বস্তুর কেন্দ্রে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অর্থনীতি এবং দুই দেশের মধ্যে চলমান শীতল যুদ্ধ। করোনা ভাইরাস মহামারি ও এই ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা দুই দেশের মধ্যকার বিরোধে চীনের জন্যই লাভজনক হয়েছে। 

সিইবিআর বলছে, দক্ষ হাতে চীনের মহামারি মোকাবিলা, শুরু থেকেই কঠোর লকডাউন এবং পশ্চিমের প্রবৃদ্ধিতে দীর্ঘমেয়াদি আঘাত- এর সবকিছু থেকেই চীনের অর্থনৈতিক দশায় ইতিবাচক উন্নতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।  

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এশিয়ার বহু দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সুসম্পর্ক আছে কিন্তু তারা চীনের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়েছে। চীন যদি এসব দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে চাপ দেয়, তাহলে নতুন ধরনের অস্থিরতা তৈরি হবে। মিত্রদের ধরে রাখতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন করে অর্থ ঢালতে হবে। 

প্রতিবেদনে আরও যা বলা হচ্ছে 
২০২১ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চীনের গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থাকবে ৫.৭%। ২০২৬-২০৩০ পর্যন্ত তা কমে ৪.৫% থাকবে। 

মহামারি শেষে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়াবে বলে অনেকের আশা থাকলেও ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রবৃদ্ধি ১.৯ শতাংশে থাকবে, তারপর তা আরও কমে দাঁড়াবে ১.৬ শতাংশে। 

ডলারের ভিত্তিতে ২০৩০ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত জাপান বিশ্বের তৃতীয় অর্থনীতির দেশ থাকবে। ওই বছরই জাপানের অর্থনীতিকে অতিক্রম করবে ভারত; যার ফলে চতুর্থ অবস্থান থেকে পঞ্চমে নেমে যেতে হবে জার্মানিকে।  

দীর্ঘদিন ধরে ওয়াশিংটনের একটি বড় অস্বস্তির জায়গা হলো চীনের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি। মার্কিন-চীন বাণিজ্য ১৯৮০ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২৩১ বিলিয়ন ডলারে উন্নতি হয়। আজ মার্কিন-চীন বাণিজ্য ঘাটতি সার্ভিস এবং পণ্য মিলিয়ে ২০১৯ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী দাঁড়িয়েছে ৬১৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার যা গত বছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার কম। 

সিইবিআরের হিসাবে বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাজ্য ২০২৪ সালে ষষ্ঠ অবস্থানে চলে যাবে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে ২০২১ সালে ব্রিটিশ অর্থনীতিতে চাপ থাকলেও তা কাটিয়ে ওঠার ইঙ্গিতও দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ডিজিটাল অর্থনীতিতে ব্রিটেনের দাপটের কারণে ২০৩৫ সালে ব্রিটিশ জিডিপি ফ্রান্সের চেয়ে বেশি থাকবে।  

বিশ্ব অর্থনীতিতে মহামারির প্রভাব প্রবৃদ্ধি কমার মাধ্যমে নয় বরং উচ্চ মূল্যস্ফীতির মাধ্যমে দৃশ্যমান হবে। 

সংস্থাটি বলছে, ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে আমরা একটি অর্থনৈতিক চক্র দেখেছি, যেখানে সুদের হার  বর্ধনশীল। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় যেসব দেশ বড় অঙ্কের ঋণ করেছে এর ফলে সেসব দেশ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।  

সূত্র : রয়টার্স।  

এনএফ