ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি শুরু ২৭ জুন থেকে। সে হিসাবে আজ সোমবারই (২৬ জুন) ছিল ঈদের আগের শেষ কর্মদিবস। কিন্তু এই দিনেও বোনাস হয়নি ৭২৮টি বড় কারখানার শ্রমিকদের। জুন মাসের ১৫ দিনের বেতন হয়নি ২ হাজার ৫০১টি কারখানায়। মে মাসের বেতন হয়নি ১০৩টি কারখানায়। 

অথচ গত ৬ জুন ঈদুল আজহার ছুটির আগেই শ্রমিকদের ঈদ বোনাস এবং জুন মাসের ১৫ দিনের বেতন দেওয়ার জন্য মালিকদের নির্দেশনা দেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী। 

পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, বেপজা, পাটকল এবং শিল্পাঞ্চল পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সার্বিক বিষয়ে বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নানা কারণে সমস্যার মধ্যদিয়ে দিন পার করছে কারখানা মালিকরা। এ কারণে বেতন-বোনাস দিতে দেরি হচ্ছে। কিছু কারখানা ছাড়া বেশিরভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল ছুটি দেওয়ার আগে মে মাসের বেতন-বোনাস দেওয়া হবে।

বিজিএমইএ সহ-সভাপতি বলেন, সরকার আমাদের বলেছিল জুন মাসের ১৫ দিনের বেতনও দিতে। কিন্তু বেশিরভাগ কারখানা মালিক হয়ত এটা করতে সক্ষম হবেন না। তারা মে মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস দিয়ে দেবেন।  

নিটওয়ার মালিকদের সংগঠনের বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেশ কিছু কারখানায় এখনো বেতন-বোনাস হয়নি। তবে এখনো কোনো শ্রমিক কিংবা শ্রমিক নেতারা বেতন বোনাস না পাওয়ার জন্য কোনো অভিযোগ করেনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আমরা ৩ হাজার কোটি টাকা চেয়েছিলাম। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের মাত্র ১৪০০ কোটি টাকা দিয়েছে। আমরা ঈদের সময় এই টাকা বেতন-বোনাস বাবদ নিয়ে শ্রমিকদের দিয়ে দেই যাতে তারা সুন্দরভাবে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। কিন্তু এ বছর পুরো টাকা না পাওয়ার কারণে আমরা বেতন-বোনাস দিতে পারিনি।

তিনি প্রত্যাশা করে বলেন, সরকারি ছুটি ২৭ থেকে শুরু হলেও বেসরকারি ছুটি শুরু হবে ২৮ জুন থেকে। ফলে যেসব কারখানায় মে মাসের বেতন-বোনাস হয়নি কালকের মধ্যে হয়ে যাবে।

শিল্পাঞ্চল পুলিশের সূত্র মতে, দেশে বর্তমানে ছোট-বড় মিলে ৯ হাজার ৯১৫টি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে সোমবার (২৬ জুন) বিকেল ৪টা পর্যন্ত  বড় ৩ হাজার ১৬৪টি কারখানার মধ্যে ঈদের বোনাস দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৪৩৬টিতে। যা শতাংশের হিসাবে ৭৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ। অর্থাৎ ৭২৮টি কারখানার শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হয়নি। যা শতাংশের হিসেবে ২৩ দশমিক ১ শতাংশ। আর বাকি ৬ হাজার ৭৫১টি কারখানার সঠিক চিত্র জানা যায়নি।

একই সময়ে বড় কারখানার মধ্যে জুন মাসের ১৫ দিনের বেতন দেওয়া হয়েছে মাত্র ৬৬৩টি কারখানা শ্রমিকদের। অর্থাৎ ২ হাজার ৫০১টি কারখানার শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হয়নি। যা শতাংশের হিসাবে ৭৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ বাকি। এছাড়া মে মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৬১টি কারখানায়। অর্থাৎ ১০৩টি কারখানায় এখনো মে মাসের বেতনও দেওয়া হয়নি।

ঈদ বোনাস

৯ হাজার ৯১৫টি কারখানার মধ্যে বড় ৩ হাজার ১৬৪টি কারখানা রয়েছে। এই কারখানার মধ্যে ২ হাজার ৪৩৬টি কারখানায় ঈদুল আজহার বোনাস দেওয়া হয়েছে। এখনও ৭২৮টি কারখানার শ্রমিকদের বোনাস দেওয়া হয়নি। যা শতাংশের হিসেবে ২৩ দশমিক ০১ শতাংশ বাকি রয়েছে।

এসব কারখানার মধ্যে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ১ হাজার ৬২৪ কারখানার মধ্যে বোনাস হয়েছে ১২০০টি কারখানায়। অর্থাৎ ৪২৪টি কারখানায় ঈদ বোনাস দেওয়া হয়নি।

নিটওয়ার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত ৬৯৯টি কারখানার মধ্যে ৫৪৪টি কারখানার শ্রমিকদের বোনাস দেওয়া হয়েছে। এখনো ১৫৫টি কারখানায় ঈদ বোনাস দেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএম) ৩৫৯টির মধ্যে বোনাস দেওয়া হয়েছে ২৬৫টিতে। আর বোনাস দেওয়া হয়নি ৯৪টি কারখানা শ্রমিকদের। বেপজার ৩৯২টি কারখানার মধ্যে ৩৭৭টির শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। এখনো বাকি রয়েছে ১৫টি কারখানা।

পাটকল খাতের ৯০টির মধ্যে শ্রমিকদের ঈদের বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে ৫০টি কারখানায়। এ খাতের বাকি রয়েছে ৪০টি কারখানার বোনাস। আর বাকি ছোট ছোট ৬ হাজার ৭৫১টির কী অবস্থা জানা যায়নি।

জুনের প্রথম ১৫ দিনের বেতন

ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে জুন মাসের প্রথম ১৫ দিনের বড় কারখানাগুলোর মধ্যে বেতন পরিশোধ করেছে ৬৬৩টি কারখানা। অর্থাৎ জুন মাসের ১৫ দিনের বেতন পাননি ২ হাজার ৫০১টি কারখানার শ্রমিকরা।

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ১ হাজার ৬২৪ কারখানার মধ্যে জুন মাসের বেতন হয়েছে ২৩৭টি কারখানায়। অর্থাৎ ১ হাজার ৩৮৭টি কারখানায় এখনো জুন মাসের ১৫ দিনের বেতন হয়নি।

নিটওয়ার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত ৬৯৯টির মধ্যে ১৯০টি বেতন পরিশোধ করেছে। এখনো বাকি রয়েছে ৫০৯টি কারখানা শ্রমিকরা, বিটিএমএর ৩৫৯টির মধ্যে ৮২টি কারখানার বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু ২২৭টি কারখানায় এখনো বেতন পরিশোধ করা হয়নি।

বেপজার ৩৯২টি কারখানার মধ্যে ১৩৫টি কারখানা শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। এখনো বাকি রয়েছে  ২৫৭টি কারখানা শ্রমিকদের জুন মাসের ১৫ দিনের বেতন।

আর ৯০টি পাটকলের মধ্যে ১৯টি পাটকলের শ্রমিকদের জুনের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। এ খাতের ৭১টি কারখানার শ্রমিকদের বেতন বাকি রয়েছে।

অর্থাৎ বড় ৩ হাজার ১৬৪টি কারখানার মধ্যে মোট ৬৬৩টি কারখানায় বেতন হয়েছে। যা শতাংশের হিসেবে ২০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এখনো ২ হাজার ৫০১টি কারখানার শ্রমিকদের জুন মাসের ১৫ দিনের বেতন দেওয়া হয়নি। শতাংশের হিসেবে ৭৯ দশমিক ৫ শতাংশ।

মে মাসের বেতন

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ১ হাজার ৬২৪ কারখানার মধ্যে মে মাসের বেতন হয়েছে ১ হাজার ৫৬৬টি কারখানায়। অর্থাৎ ৫৮টি কারখানায় এখনো মে মাসের বেতন হয়নি।

নিটওয়ার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত ৬৯৯টি কারখানার মধ্যে ৬৭১ কারখানার বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। ২৮টির বেতন পরিশোধ করা হয়নি।

বিটিএমএর ৩৫৯টি কারখানার মধ্যে ৩৪৪ কারখানার বেতন পরিশোধ করা হয়েছে, বাকি আছে ১৫টির। বেপজার ৩৯২টির মধ্যে ৩৯০ কারখানার বেতন পরিশোধ করা হয়েছে, বাকি আছে ২টির। তবে পাটকল ৯০টিরই বেতন পরিশোধ করা হয়েছে।

এমআই/কেএ