দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে বাদ যায়নি যাকাতের কাপড়ের দামও। গত বছরের তুলনায় এবারও যাকাতের শাড়ি ও লুঙ্গির দাম প্রতি পিসে ৮০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর যাকাতের কাপড় বিক্রি এখনও শুরু হয়নি। ১৫ রোজার পর থেকে যাকাতের কাপড় বিক্রি শুরু হবে। গতবারের তুলনায় এবার যাকাতের কাপড়ের দাম বেড়েছে, সেই সঙ্গে ক্রেতার সংখ্যাও তুলনামূলক কম। বিভিন্ন জায়গায় যাকাতের কাপড়ের বদলে নগদ টাকা দেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় যাকাতের কাপড়ের চাহিদাও কমেছে।

প্রতিবছর রমজানে প্রচুর পরিমাণে যাকাতের কাপড় বিক্রি হয়। যে কারণে ব্যবসায়ীরাও এই বাজারটি ধরার জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নেন। রাজধানীতে বেশ কিছু স্থানে যাকাতের কাপড় বিক্রি হয়। এর মধ্যে সদরঘাটের শরীফ মার্কেট, ইসলামপুর শাড়ি পট্টি, নবাবপুর শাড়ি পট্টি, পীর ইয়ামেনি মার্কেট, গুলিস্তান খদ্দর মার্কেট অন্যতম।

গুলিস্তানের পীর ইয়ামেনি মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ডে ৫০টির বেশি শাড়ি লুঙ্গির দোকান রয়েছে। যার প্রতিটি দোকানেই যাকাতের কাপড় পাওয়া যাচ্ছে। এসব দোকানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর যাকাতের শাড়ির দাম‌ ৩৫০ থেকে শুরু করে ৫০০-৬০০ টাকার মধ্যে রয়েছে। পাশাপাশি ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে যাকাতের লুঙ্গি।

বিক্রেতারা বলছেন, সবকিছুর দাম বেড়েছে। তাই এবার যাকাতের কাপড়েরও দাম প্রায় ৮০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।‌

গুলিস্তানের পীর ইয়ামেনি মার্কেটের লুঙ্গি বিতান নামে একটি দোকানের ব্যবস্থাপক জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা পর্যাপ্ত মাল নিয়ে এসেছি রমজান উপলক্ষ্যে। কিন্তু এখনো সেভাবে ক্রেতা সাধারণ আসতে শুরু করেনি। আশা করা যায়, ১৫ রোজার পর থেকে যাকাতের কাপড় বিক্রি বেড়ে যাবে। অন্যান্য বছর এ সময়ই জমজমাট হয়ে যেত যাকাতের কাপড় বিক্রি। কিন্তু এ বছর এখনো সেভাবে জমে উঠেনি। এছাড়া করোনাকালের আগ পর্যন্ত যাকাতের কাপড় খুব বিক্রি হতো, করোনা মহামারির পর কাপড়ের বদলে যাকাত হিসেবে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। যে কারণে যাকাতের কাপড় শাড়ি লুঙ্গি এসব বিক্রি আগের চেয়ে কমেছে।

লুঙ্গির দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সর্বনিম্ন ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় এ বছর যাকাতের লুঙ্গি পাওয়া যাচ্ছে। তবে ৪০০/৫০০ টাকা দামেরও লুঙ্গি বিক্রি হয় যাকাতের লুঙ্গি হিসেবে। আগে যে লুঙ্গি ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে সেই লুঙ্গির দাম এবার ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। এছাড়া ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় যেসব লুঙ্গি গত বছর বিক্রি হয়েছে সেই মনের লুঙ্গির এবার ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গুলিস্তান খদ্দর মার্কেটের আরেক দোকা‌নি বাচ্চু মিয়া বলেন, সুতা থেকে শুরু করে সব ধরনের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। যাকাতের শাড়ি সর্বনিম্ন ৩৫০ টাকা থেকে পাওয়া যাচ্ছে এবার। এছাড়া মান ভেদে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার শাড়ি এসেছে এবার।

রাজধানীর মতিঝিলে একটি কাপড়ের দোকানের ম্যানেজার মাসুদ রানা বলেন, একসময় রমজানের শুরু থেকেই যাকাতের কাপড় বিক্রি শুরু হয়ে যেত। কিন্তু করোনা মহামারির পর যাকাত হিসেবে কাপড়ের বদলে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এরপর থেকেই মূলত যাকাতের কাপড় আগের মতো আর বিক্রি হচ্ছে না।

রাজধানীর পীর ইয়ামেনি মার্কেটে যাকাতের কাপড় কিনতে এসেছেন মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা  সৈয়দ নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রতিবছরই রমজানে এ মার্কেট থেকে যাকাতের কাপড় কিনে আমার জেলা কুষ্টিয়ায় পাঠাই। সেখানেই যাকাতের কাপড় আমি বিতরণ করি। তবে এ বছর বাজারে এসে দেখছি শাড়ি লুঙ্গির দাম বেশি। আমি চেষ্টা করি একটু ভালো মানের যাকাতের কাপড় দিতে। কারণ সংখ্যায় কম দেব কিন্তু যে মানুষটিকে দেব সে যেন কাপড়টি ব্যবহার করতে পারে। শাড়ি ও লুঙ্গির দাম গতবারের তুলনায় ৮০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দুই একটা দোকান ঘুরে দেখলাম প্রচুর কালেকশন আছে, তুলনামূলক দাম বেশি। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আরও কিছু কালেকশন ১৫ রোজার পর আসবে। তাই আজ বাজার যাচাই করে যাচ্ছি, তিন চার দিন পর এসে যাকাতের শাড়ি লুঙ্গি নিয়ে যাব।

এএসএস/এসকেডি