মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বাজার মনিটরিংয়ে রেখে ভোগ্য পণ্যসহ নিত্যপণ্যের মূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখাই প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম।

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির ৪৪তম সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং এফবিসিসিআইয়ের যৌথ উদ্যোগে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

অনুষ্ঠানে বর্তমান মূল্যস্ফীতি এবং নিম্ন আয়ের মানুষের প্রকৃত আয় বিবেচনায় নিয়ে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। অন্যদিকে সিনিয়র সিটিজেন ও নারীদের জন্য ৫ লাখ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়। বর্তমান মূল্যস্ফীতি এবং নিম্ন আয়ের মানুষের প্রকৃত আয় বিবেচনায় নিয়ে এ দাবি জানানো হয়েছে।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমানে প্রায় এক কোটি টিআইএনধারী রয়েছে। এর মধ্যে আনুমানিক ৩৫ লাখ আয়কর রিটার্ন দাখিল করে। যাদের আয় করমুক্ত সীমার উপরে আছে তাদেরকে আয়কর রিটার্ন দাখিলের আওতায় আনা দরকার।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমানে জাতীয় অর্থনীতি একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ালেও করোনা পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রভাব এবং চলমান রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্য সংকটের মধ্যেও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতির উন্নয়নের গতিধারাকে এগিয়ে নিতে হচ্ছে। এ জন্য দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশকে আরও সুদৃঢ় ও জোরদার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ অর্থনীতি সঠিক গতিতে চললেই সরকার তার কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আহরণ করতে পারবে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বাজার মনিটরিং, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রেমিট্যান্স প্রবাহ, রপ্তানি বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ/বহুমুখীকরণ/নতুন বাজার সংযোজন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, সুদের হার এবং আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন কার্যক্রম জোরদার করা, ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বৃদ্ধি, রাজস্ব নীতির সংস্কার এবং মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয়, সর্বস্তরে সুশাসন এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাই জাতীয় অর্থনীতিতে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে এফবিসিসিআই মনে করছে।

মাহবুবুল আলম বলেন, ব্যাংকিং ও ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরে শৃঙ্খলা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকিং খাতের সংস্কার বিষয়ে সরকার এরই মধ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা ইতিবাচক ফল নিয়ে আসবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। বিনিয়োগ বাড়াতে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার লক্ষ্যে সুদের হার স্থিতিশীল রাখতে হবে। বৈদেশিক অর্থায়নে এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ও অনুৎপাদনশীল প্রকল্প গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। অর্থ পাচার বা মানিলন্ডারিং রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন হবে।

এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি করার পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। বিদেশে দক্ষ জনসম্পদ পাঠাতে পারলে ভালো এবং টেকসই রেমিট্যান্স মিলবে। দক্ষ জনবলের পাঠানো রেমিট্যান্স অধিকতর মূল্য সংযোজন করতে সক্ষম। সম্ভাবনাময় এবং নতুন জনশক্তি রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে উদ্যোগ নিতে হবে। ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি তথা বাংলাদেশের বৈদেশিক মিশনগুলোকে দেশের রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

আরএম/এমজে