শ‌রীয়াহভিত্তিক বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে চতুর্থ প্রজন্মের পদ্মা ব্যাংক। একীভূতকরণের বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে নিরীক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিরীক্ষক দুটি ব্যাংকের সম্পদ মূল্যায়ন করে দেবে।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মেজবাউল হক বলেন, স্বেচ্ছায় যারা এখন পর্যন্ত দুর্বল ৫টি ব্যাংক অন্য ৫ ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদেরকে নিয়ে কাজ করা হবে। একীভূত করার প্রক্রিয়ায় দুই থেকে তিন বছর সময় লাগবে। এসময় ব্যাংকগুলো তাদের স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

মুখপাত্র জানান, এখন পর্যন্ত একীভূত হতে আবেদন করেছে এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংক, তারা সম‌ঝোতা চুক্তি করেছে। তাদের সম্পদ মুল্যায়ন করতে অডিট ফার্ম ‘রহমান রহমান হক’কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি দুটি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা মুল্যায়ন করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে। সম্পদ মূল্যায়নের পর দুটি ব্যাংক একমত হলে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যাবে। কীভাবে এগিয়ে যাবে তা একীভূতকরণ নীতিমালায় বলা হয়েছে।

এর আগে গত ১৮ মার্চ ব্যাংক দুটি একীভূতকরণের সমঝোতা চুক্তিতে সই করে। এটি ছিল একীভূতকরণের প্রথম ধাপ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় বলা হয়েছে, সম্পদ মূল্যায়নে উভয় ব্যাংককে একমত হতে হবে। যদি তারা চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারে, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক মধ্যস্থতাকারী হয়ে মতপার্থক্য দূর করতে সহায়তা করবে।

নিয়ম অনুযায়ী, এক্সিম ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অনুমোদন লাগবে। এছাড়া একীভূত করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন পেলে দুটি ব্যাংককে কোম্পানি আইন-১৯৯৪ এর আওতায় অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা মেনে চলতে হবে। তাদেরকে হাইকোর্টে আবেদন করতে হবে ও একীভূতকরণের প্রকল্প জমা দিতে হবে। হাইকোর্টে অনুমোদনের পর দুই ব্যাংকের একীভূতকরণের বিষয়টি চূড়ান্তভাবে কার্যকর করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক

দুর্বল ৫টি ব্যাংকের বাইরে অন্য কোনো ব্যাংকের একীভূতকরণের আবেদন নেওয়া হবে না জানিয়ে মুখপাত্র জানান, ৫টি ব্যাংক একীভূত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছে। সক্ষমতা অনুসারে এই ৫ ব্যাংককে নিয়ে কাজ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বেশি কাজ করা সম্ভব নয়। এসব ব্যাংকের একীভূতকরণের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরে আরও দুর্বল ব্যাংকের বিষয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১০টি ব্যাংকের একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলো- এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংক, সিটি ব্যাংকের সঙ্গে সরকারি মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক, ইউসিবির সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংক, সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে বিডিবিএল এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৯ এপ্রিল জানানো হয়- বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির (ইউসিবি) সঙ্গে একীভূত হচ্ছে সংকটে থাকা বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক। ওইদিন ইউসিবি ব্যাংকের একজন পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ডেকে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈঠক করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বৈঠকে ইউসিবির কর্তৃপক্ষকে একীভূত করার বিষয় উদ্যোগ নেওয়া কথা জানানো হয়। এসময় বৈঠকে ন্যাশনাল ব্যাংকের কেউ উপস্থিত ছিলেন না।

তার একদিন আগে ৮ এপ্রিল বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে সরকারি মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। ওই দিন সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিকে ডেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। ওই বৈঠকেও বেসিক ব্যাংকের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। ন্যাশনাল ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও ন্যাশনাল ব্যাংকের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না। গভর্নর এককভাবে এসব সিদ্ধান্ত  নিচ্ছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
 
এর আগে সরকারি দুটি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো হলো- বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে (বিডিবিএল) এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে বিডিবিএল। আর বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে রাকাব। একীভূত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।      
 
অনিয়ম-জালিয়াতিতে সংকটে পড়া পদ্মা ব্যাংককে (পূর্ব নাম- ফারমার্স ব্যাংক) শ‌রীয়াহভিত্তিক বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার বিষয় ঘোষণা দেওয়া হয়। এটা একীভূত করা প্রথম সিদ্ধান্ত। এ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে গত ২৫ মার্চ বেসরকারি খাতের এ দুই ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) সই হয়েছে।

এসআই/পিএইচ