রাজধানীর একটি মার্কেটের দোকানপাট/ ছবি : সুমন শেখ

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আর্থিক সুবিধা এখনও পাননি ৬৯ শতাংশ ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ী। আর প্রণোদনা প্যাকেজ সম্পর্কে অবগত নন ৯ শতাংশ ব্যবসায়ী।

রোববার (২ মে) কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আস্থা ও প্রত্যাশার ওপর সানেম ও দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত চতুর্থ পর্যায়ের জরিপের ফলাফলে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

এক ওয়েবিনারে জরিপের ফল উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। আলোচক হিসেবে ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রহমান। 

বাংলাদেশের ৮ বিভাগের ৩৬টি জেলার মোট ৫০৩টি ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ওপর এই জরিপ করা হয়। এর মধ্যে ২৫৩টি উৎপাদন খাতের এবং ২৫০টি সেবা খাতের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান। উৎপাদন খাতের তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, হালকা প্রকৌশল ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের প্রতিষ্ঠানগুলো জরিপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। 

সেবা খাতের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন, আইসিটি ও টেলিকমিউনিকেশন, আর্থিকখাত ও রিয়েল এস্টেটখাত জরিপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০২১ সালের এপ্রিলের ৬ থেকে ১৮ তারিখের মধ্যে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ পদাধিকারীদের সঙ্গে ফোনালাপের মাধ্যমে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়।   

জরিপে দেখা গেছে, হালকা প্রকৌশল, পরিবহন এবং রেস্টুরেন্ট খাতের ব্যবসায় আস্থা সবচেয়ে কম। ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার আস্থা সূচক ৩৯ দশমিক ০২, মাঝারি প্রতিষ্ঠানের ৪০ দশমিক ৮৩ এবং বড় প্রতিষ্ঠানের ৪৬ দশমিক ৬১। 

২০২১ সালের এপ্রিল মাসে পরিচালিত এ জরিপে অংশ নেওয়া ২২ শতাংশ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তারা প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা পেয়েছেন। ৬৯ শতাংশ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তারা প্রণোদনা প্যাকেজ পাননি এবং ৯ শতাংশ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তারা প্যাকেজ সম্পর্কে জানেন না। জরিপকৃত বড় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজ পেয়েছে ৪৬ শতাংশ, মাঝারি ৩০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র ও ছোট প্রতিষ্ঠান ৯ শতাংশ। 

জরিপ বলছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর মাত্র ২ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন, অর্থনীতি শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের দিকে যাচ্ছে। মাঝারি মানের পুনরুদ্ধারের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করেন ৩১ শতাংশ এবং দুর্বল মানের পুনরুদ্ধারের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করেন ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ী।  

ওয়েবনারে অংশ নিয়ে অধ্যাপক ড সেলিম রায়হান চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশল, পাইকারি ব্যবসা, পরিবহন, তৈরি পোশাক, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং রিয়েল এস্টেট খাতে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। এই খাতগুলোতে দীর্ঘ সময়ের জন্য সুদ হার কমানো, এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড গঠনের কথা তিনি উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে এসএমই খাতে ঋণ ও প্রণোদনা প্রাপ্তি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। 

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতে গত বছর প্রথম প্রান্তিকে বড় ধসের পর আমরা সার্বিক পুনরুদ্ধার দেখতে পেয়েছি। দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগ পর্যন্ত ধারাবাহিক পুনরুদ্ধার দেখা গেছে। কিন্তু পুনরুদ্ধার সবার জন্য একরকম হয়নি। আর্থিক, পোশাকখাত, আইসিটিখাত এবং বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি ভালো করেছে। 

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায় আস্থা বাড়ানোর জন্য সরকারকে খাতভিত্তিক গাইডলাইন তৈরি করতে হবে এবং তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পকে মহামারির প্রভাব থেকে বাঁচাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ বিতরণের জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকতে হবে। 

তিনি বলেন, বিদেশি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার পূর্বে মূলত দেশের করকাঠামো ও দেশীয় ব্যবসায়ীদের আস্থা বিবেচনায় নেন। এজন্য দেশীয় ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পরিবেশের ওপর আস্থা বাড়ানোর বিকল্প নেই। তিনি করজাল বা করের আওতায় অধিকসংখ্যক নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানকে আনার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন। 

সরকারের করোনার টিকা কূটনীতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, চীন ও রাশিয়ার টিকা প্রদান শুরু হলে ব্যবসার আস্থার উন্নতি হবে। মহামারির সময়ে দেশীয় অনলাইন বা ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের নীতি সহায়তা দেওয়ার ওপর তিনি গুরুত্ব দেন।
 
আরএম/আরএইচ