করোনাভাইরাসের এ দুর্যোগকালেও মুনাফা বেড়েছে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের। ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যাংকটির কর পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ১৪১ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৩ শতাংশ বেশি। পাশাপাশি প্রথম প্রান্তিকে খেলাপি ঋণও বেড়েছে ব্যাংকটির। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকের নন-পারফর্মিং লোন তথা এনপিএল (খেলাপি ঋণ) অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৪.৪ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।

বৃহস্পতিবার (২৭ মে) ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে একটি আর্নিংস ডিসক্লোজার অনুষ্ঠানে ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক ফলাফল প্রকাশ করে ব্র্যাক ব্যাংক।

বেসরকারি ব্যাংকটি বলছে, ২০২০ এর প্রথম ছয় মাস কোভিড-১৯-এর প্রকোপ সামলে বাকি সময় স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক খাতের পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বছর শেষ করেছিল ব্যাংকটি। ২০২১ সালের প্রথম তিন মাস বেশ গোছানো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শুরু করে ব্র্যাক ব্যাংক। 

২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ব্যাংক। বেশ আগে থেকেই স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করায় এবং ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে ব্যাংকিং পরিষেবা অব্যাহত রেখে ও ডিজিটাল গ্রাহক পরিষেবা সম্প্রসারণের মাধ্যমে ব্যবসায়িক সফলতা ধরে রাখতে সক্ষম হয় তারা। এর ফলে কঠিন সময়ের মাঝেও গ্রাহকসেবা অব্যাহত রাখতে এবং মহামারির প্রকোপ মোকাবিলা করে প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে সক্ষম হয় প্রতিষ্ঠানটি।

তবে এপ্রিল ২০২১ থেকে কোভিড-১৯-এর নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে সংক্রমণ হার বেড়ে যাওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণে সরকার বিধিনিষেধ জারি করায় ঘরে থেকে কাজের চর্চা শুরু হয়, যা কিছুটা দুশ্চিন্তার কারণ।

২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে ব্র্যাক ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, একক ভিত্তিতে বছর প্রতি ৩১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ১৪১ কোটি টাকা এবং সমন্বিত ভিত্তিতে বছর প্রতি ৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ১০৯ কোটি টাকার কর পরবর্তী নেট মুনাফা (এনপিএটি) করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। এছাড়া শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল একক ভিত্তিতে ১.০৬ টাকা এবং সমন্বিত ভিত্তিতে ০.৯৩ টাকা। গ্রাহক আমানত চার শতাংশ এবং আমানত মিশ্রণ (কাসা) ৪৩ শতাংশ থেকে ৫৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। মহামারি চলাকালে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করায় ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ০.৪ শতাংশ। এসএমই ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৮ শতাংশ; প্রথম প্রান্তিকে রিটেইল ঋণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেলেও করপোরেট ও কমার্শিয়াল ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সতর্কতা অব্যাহত রাখে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি।

প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকের নন-পারফর্মিং লোন (খেলাপি ঋণ) অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৪.৪ শতাংশে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ০.৬ শতাংশ বেশি।

ব্যাংকটির দাবি, মহামারি থেকে উদ্ভূত সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য ব্যাংকের এনপিএল কভারেজ অনুপাত ১১৯ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছিল। বাংলাদেশের ব্যাংকিং শিল্পে এটি অন্যতম উচ্চ এনপিএল কাভারেজ অনুপাত।

২০২১-এর প্রথম প্রান্তিক শেষে সমন্বিত মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত (সিএআর) রিপোর্ট করা হয়েছে ১৫.১২ শতাংশ যার ৯৫ শতাংশই ছিল টিয়ার-১ মূলধন, যা দেশের ব্যাংকিং খাতে সর্বোচ্চ। ব্যাংকের একক ভিত্তিতে মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত ছিল ১৪.৫৬ শতাংশ, যা নিয়ন্ত্রক সংস্থা নির্দেশিত ১২.৫ শতাংশ থেকে বেশি।

চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সমন্বিত ভিত্তিতে ব্যাংকের শেয়ার প্রতি নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ছিল ৩৬.২৪ টাকা এবং একক ভিত্তিতে ছিল ৩৫.০৪ টাকা।

ব্যাংকের আর্থিক ফলাফল ও কৌশল রূপরেখা উপস্থাপনকালে উপস্থিত ছিলেন- ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন, ডিএমডি অ্যান্ড চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার এম মাসুদ রানা, ডিএমডি অ্যান্ড চিফ অপারেটিং অফিসার সাব্বির হোসেন, ডিএমডি অ্যান্ড হেড অফ করপোরেট ব্যাংকিং তারেক রেফাত উল্লাাহ খানসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এসআই/এফআর