অর্থনীতিবিদ ড. শামসুল আলম

সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ও একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ড. শামসুল আলম বলেছেন, ‘তামাক বন্ধ নিয়ে বিতর্ক আছে। ছোট নেশা বাদ গেলে যুবকরা বড় নেশা গ্রহণ করবে কি-না, এটা নিয়ে আলোচনা করা উচিত। তামাক বন্ধ করলে অনেকে ইয়াবার দিকেও ঝুঁকবে। এটা নিয়েও ভাবতে হবে। পৃথিবীর অনেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক দেশ তামাক থেকে বের হতে পারেনি। আমরা আবেগে অনেক কথা বলতে পারি, কিন্তু বাস্তবে কী হবে তা ভাবতে হবে।’

আসন্ন জাতীয় বাজেট ২০২১-২২-এ তামাক কর বৃদ্ধির মাধ্যমে যুব সমাজকে তামাক সেবনে নিরুৎসাহিত করা শীর্ষক বৃহস্পতিবার (২৭ মে) এক ভার্চুয়াল সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে সাংবাদিকদের সংগঠন ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) ও বেসরকারি সংস্থা ডরপ’র যৌথ উদ্যোগে ভার্চুয়াল সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহ্সান রাসেল।

ড. শামসুল আলম বলেন, ‘যুব সমাজকে নানা নেশা থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এটা যুব সমাজের জন্য অন্যতম সমস্যা। তবে তামাক শূন্য দেশ নেই এর মানে এই নয় যে আমরা তামাকশূন্য হব না।’

অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমাদের যুবসমাজকে না বাঁচাতে পারলে দেশের টার্গেট পূরণ হবে না। ২০৪০ সালে উন্নত দেশে রূপ দিতে হলে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে। তামাক ক্ষতিকারক পণ্য। তামাকে বেশি বেশি ট্যাক্স বৃদ্ধি করতে হবে। তামাকে খুব একটা বেশি ট্যাক্স বৃদ্ধি হচ্ছে বলে মনে হয় না। তামাকে ট্যাক্স বৃদ্ধির মাধ্যমে যুবসমাজকে তামাকমুক্ত করতে পারব। যারা আগে সেবন করত তাদের রক্ষা করতে পারব।’

আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় অনেক সূচকে অনেক দেশকে আমরা পেছনে ফেলেছি। এমনকি মাথাপিছু আয় ভারতের থেকে এগিয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমাদের দেশে তামাকপণ্যের দাম কম। এটা বাড়াতে না পারলে দেশের জন্য ক্ষতি, যুব সমাজের জন্য শঙ্কার। তামাকের দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে, অন্যদিকে ক্রয় ক্ষমতাও বেড়েছে। ফলে তামাকের ব্যবহার কমছে না। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম দামে তামাকপণ্য বিক্রি করছে। সরকার আশা করি, এই বিষয়ে নজর দেবে। দেশে ৩৫ শতাংশ লোক তামাকপণ্য ব্যবহার করেন। এদের অধিকাংশ তরুণ। তরুণদের রক্ষা না করলে দেশ তার লক্ষ্যে পৌঁছাবে না।’

ডিজেএফবির সভাপতি হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘যুব সমাজের হাতে তামাক তুলে দিলে আউটপুট পাব না। করের বড় মাধ্যম হচ্ছে তামাক। তামাক আমাদের রেভিনিউকে (আয়) সমৃদ্ধ করছে, এই বিষয়ে অনেকে যুক্তি তুলে ধরেছেন। ২০১৮-১৯ সালে দেখেছি ২২ হাজার কোটি টাকার কর এসে তামাক থেকে একইভাবে ৩০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে চিকিৎসা বাবদ। তাহলে কী দেখলাম, অতিরিক্ত ৮ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ক্ষতি হয়েছে। আমাদের যুব সমাজ নেশায় প্রবেশ করছে, এর প্রাথমিক অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে সিগারেট। প্রথমে সিগারেট ধরে তারপরে নৈতিক অবক্ষয় শুরু হয়।’

ডরপ’র প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর রুবিনা ইসলাম বলেন, ‘যুব সমাজ তামাক ব্যবহার করে কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তখন ঘটি-বাটি বিক্রি করে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। অনেক পরিবার রাস্তায় নেমে পড়ছে। এসব যুবসমাজকে প্রটেক্ট (রক্ষা) করা খুবই জরুরি। তামাক সেবনে যুব সমাজকে নিরুৎসাহি করতে হবে। সিঙ্গেল শলাকা বিক্রি বন্ধ করতে হবে। অনেক শিক্ষার্থী ১০ টাকায় এক শলাকা কিনে সেবন করে। সিঙ্গেল শলাকা বিক্রি না করে প্যাকেট বিক্রি করতে হবে। কারণ অনেক ছাত্রের কাছে এক প্যাকেট সিগারেট কেনার টাকা থাকে না।’

প্রজ্ঞার টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রোগ্রামের হেড হাসান শাহরিয়ার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করার সময় বলেন, ‘দেশে চার কোটি মানুষ তামাকপণ্য ব্যবহার করেন। তামাকপণ্যের ধরন ও ব্র্যান্ডভেদে কর চালু আছে। বাজারে ৪-১৪ টাকায় সিগারেট পাওয়া যায়। মানুষ কম দামের সিগারেটে ঝুঁকছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে তামাকপণ্যের দাম কম। সিগারেট অধিক সহজলভ্য হচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়লে বাড়েনি সিগারেটের দাম। ২০৪০ সালে তামাকমুক্ত টার্গেট পূরণ করতে হলে প্রতি বছর দেড় শতাংশ হারে তামাকের ব্যবহার কমাতে হবে। তামাকখাতে রাজস্ব ২২ হাজার কোটি টাকা। তামাক ব্যবহারে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। ফলে তামাক প্রতি বছর দেশের আট হাজার কোটি টাকা ক্ষতি করে যাচ্ছে।’

ডিজেএফবির কার্যনির্বাহী সদস্য সুশান্ত সিনহার সঞ্চালনায় সংলাপে অংশ নেন- সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন, ডরপ’র চেয়ারম্যান আজহার আলী তালুকদার, ডিজেএফবির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান, সহ-সভাপতি হামিদুজ্জামান মামুন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মামুন আব্দুল্লাহ, প্রচার সম্পাদক সাইদ রিপন, ডরপ’র উপ পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান প্রমুখ।

এসআর/এফআর