২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর মানুষদের চাকরি দিলে বিশেষ কর ছাড়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ প্রস্তাবিত বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাব করেন। ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, যদি কোনো প্রতিষ্ঠান তার মোট কর্মচারীর ১০ শতাংশ বা ১০০ জনের বেশি তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়, তবে ওই কর্মচারীদের পরিশোধিত বেতনের ৭৫ শতাংশ বা প্রদেয় করের ৫ শতাংশ, যেটি কম, তা নিয়োগকারীকে কর রেয়াত হিসেবে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করছি।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকার দেশের প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সামাজিক এবং অর্থনীতির মূলধারায় অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অন্যতম একটি অংশ হচ্ছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। এ জনগোষ্ঠী অন্যান্য মানুষের চেয়ে আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে আছে এবং তারা সমাজের মূলধারার বাইরে রয়েছে।

আ হ মুস্তফা কামাল বলেন, কর্মক্ষম এ জনগোষ্ঠীকে উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে পারলে সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের কর্মসংস্থান, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক আত্তীকরণের লক্ষ্যে বিশেষ কর প্রণোদনার বিধান প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হলো।

তবে বাজেট বক্তৃতায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। যদিও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা ছাড়ালে দিতে হবে কর।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া বাজেট অধিবেশনে উপস্থিত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, তথ্যমন্ত্রী ড হাছান মাহমুদ প্রমুখ।‌

এর আগে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদনে দুপুর ১২টায় জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার ওই বিশেষ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। পরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাজেটে সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর দেন।

‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘাটতি বাজেট হতে যাচ্ছে ৫০তম এ বাজেট। আলোচিত এই বাজেটে অনুদানসহ ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৬ দশমিক ১ শতাংশ। অনুদান বাদ দিলে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।

একাদশ জাতীয় সংসদের ত্রয়োদশ (বাজেট) অধিবেশনে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন হচ্ছে। করোনাকালের দ্বিতীয় এই বাজেট অধিবেশন হচ্ছে সংক্ষিপ্ত পরিসরে।

মহামারি করোনার ধাক্কা সামলাতে এবারের বাজেটে আয়ের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে সরকার। সেজন্য বাজেটে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩৬ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা বেশি।

চলতি অর্থবছরে এ আয়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। যদিও বাজেটে মূল লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৩ কোটি টাকা। আয়ের মধ্যে রাজস্ব খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক অনুদান নেওয়া হবে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

জেইউ/এসএম