ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পৃথক বিভাগ কিংবা স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয়ের দাবি করেছে ভোক্তাদের জন্য গড়া সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

বুধবার (১৬ জুন) ২০২০ সালের জীবনযাত্রার ব্যয় ও ভোক্তা-স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করতে গিয়ে সংগঠনটি এমন দাবি জানায়।

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান, সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভুইয়া সংযুক্ত ছিলেন।

প্রতিবেদনে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পৃথক বিভাগ অথবা স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে গিয়ে ক্যাব বলে, ভোক্তা শ্রেণি দেশের সর্ব বৃহৎ অর্থনৈতিক গোষ্ঠী। তাদের জীবনমানের উন্নয়ন আর দেশের অগ্রগতি সমার্থক। প্রতিবেশী দেশ ভারত ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ ও প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশে ১৯৯৭ সালে পৃথক মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করেছে।

সংগঠনটি আরও বলে, সাম্প্রতিক সময়ে পেঁয়াজ বা ভোজ্য তেলের দাম বাড়লে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে, চালের দাম বাড়লে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে, আলুর দাম বাড়লে কৃষি মন্ত্রণালয়কে, লবণের দাম বাড়লে শিল্প মন্ত্রণালয়কে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখেছি। কিন্তু ভোক্তার স্বার্থ সার্বিকভাবে দেখা এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে সমন্বয় সাধন করার জন্য একক কোনো মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে নেই।

সরকার প্রতিনিয়ত নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারের সিদ্ধান্ত ভোক্তাদের ওপর কী প্রভাব ফেলবে তা বিবেচনায় আসে না। এ প্রেক্ষাপটে ভোক্তা-স্বার্থ বিবেচনায়, ভোক্তা-স্বার্থ সংরক্ষণ এবং সমন্বয় করার জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় বা বিভাগ সৃষ্টি করা যেতে পারে।

এ বিষয়ে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল থেকে যাতে দরিদ্র, স্বল্প-আয় এবং নিম্ন-মধ্য বিত্তের ভোক্তারা বঞ্চিত না হন, সেজন্য জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে রাখা জরুরি। বিশেষ করে ১৫ থেকে ২০টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখার দায়িত্ব অর্পণ করে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় বা বিভাগ গঠন যৌক্তিক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বিজনেস অ্যাফেয়ার্স ও কনজ্যুমার্স অ্যাফেয়ার্স নামে দুইটি পৃথক বিভাগ সৃষ্টি করেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ভোক্তা স্বার্থের সমন্বয় সাধনও সহজ হবে।

এদিকে ঋণ খেলাপির বিষয়ে ক্যাবের প্রতিবেদন বলছে, জোর প্রচারণা করা হয় যে সুদের হার কমানো হলে খেলাপি ঋণ আদায় সুগম হবে, বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনীতিতে আরও গতি সঞ্চার হবে। সরকারের উচ্চ মহলে এই ধারণা গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতের সুদের হার সর্বোচ্চ ছয় শতাংশ এবং ঋণের সর্বোচ্চ হার নয় শতাংশ নির্ধারণ করে আদেশ জারি করেছে। তবে অ-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ আদেশের আওতা বহির্ভূত রাখা হয়। কিন্তু মোট খেলাপি ঋণের দুই-তৃতীয়াংশের অধিক অর্থ আদায় রিট পিটিশন ও আইনি জটিলতার কারণে বছরের পর বছর বিলম্বিত হচ্ছে।

আইন এবং আইনি প্রক্রিয়া সংস্কার করে দ্রুত, মামলা দায়েরের অনূর্ধ্ব এক বছরের মধ্যে খেলাপি ঋণ আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ না করা হলে আর্থিক খাতের রক্তক্ষরণ ও আমানতকারীদের অর্থের সুরক্ষা সম্ভব হবে না বলেও ক্যাব জানায়।

আরএম/এমএইচএস