পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে বাপার নির্বাচন বোর্ড বাতিল, ভোট স্থগিত
নির্বাচন বোর্ড ও নির্বাচন আপিল বোর্ডের পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) ২০২১-২০২৩ মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
সংগঠনটির সাধারণ সদস্যদের অনাস্থার কারণে নির্বাচন বোর্ড ও নির্বাচন আপিল বোর্ড ভেঙে দিয়ে নতুন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সংগঠনটির কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছে।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, বাপার ২০২১-২০২৩ মেয়াদে কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের জন্য গত বছরের ৫ মার্চ তিন সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন বোর্ড ও তিন সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন আপিল বোর্ড গঠন করা হয়। নির্বাচন বোর্ডের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৯ জুন (শনিবার) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ২ জুন বাপার কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভা ও ১৬ জুন মুলতবি জরুরি সভায় নির্বাচন বোর্ডের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
পাশাপাশি সভায় কার্যনির্বাহী কমিটির অধিকাংশ সদস্য নির্বাচন বোর্ডের পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে তাদের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেন।
বিজ্ঞাপন
এমন পরিস্থিতিতে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে বাপা কর্তৃক গঠিত (২০২০ সালের ৫ মার্চ) নির্বাচন বোর্ড ও নির্বাচন আপিল বোর্ডের সদস্যদের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে নির্বাচন বোর্ড ও নির্বাচন আপিল বোর্ড গঠন করেছে সংগঠনটির কার্যনির্বাহী কমিটি।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বাপার সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বুধবার (১৬ জুন) সাধারণ সদস্যদের জানানো হয়েছে, ২০২১-২০২৩ মেয়াদে কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনে পক্ষপাতমূলক আচরণ ও সিদ্ধান্তের কারণে নির্বাচন বোর্ড ও নির্বাচন আপিল বোর্ডের সদস্যদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে অব্যাহতিপ্রাপ্ত নির্বাচন বোর্ড ঘোষিত ১৯ জুনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না বলেও জানানো হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, চলতি বছরের ৬ এপ্রিল ব্যবসায়ীক সংগঠনের নির্বাচন বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশনা মোতাবেক নির্বাচন করতে বুধবার (১৬ জুন ) বাপার নতুন নির্বাচন বোর্ড ও নির্বাচন আপিল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বর্তমান করোনা মহামারি নিয়ে সরকারি নিদের্শনা অনুযায়ী বাপার বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করবে বলে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাপার সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্বাচনী বোর্ড পক্ষপাতমূলক আচরণ ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ভোটার তালিকায় প্রতিনিধি না রেখে মূল মালিককে ভোটার করে চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করতে। তারা আমাদের সদস্য কোম্পানির ৫৯ জন প্রতিনিধিকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। কিন্তু মূল কোম্পানির মালিকদের ভোটার তালিকায় সংযুক্ত করে চূড়ান্তু ভোটার তালিকা করেনি। যাদের মধ্যে অ্যাগ্রো খাতের নেতৃত্ব স্থানীয় স্কয়ার, ড্যানিশ, বেঙ্গল মিট, কাজী ফার্ম, এসিআই, প্রাণ, সিটির মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ভোটার রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মূলত বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রতিনিধি দিয়েই সব কিছু পরিচালনা করেন। আমাদের ৩০০ মেম্বারের মধ্যে ২৩০ জন ভোটার, তার মধ্যে ৫৯ জন বাদ পড়েছেন। এছাড়া তারা একটি পক্ষকে সুবিধা দিতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচন করতে চাচ্ছে। নির্বাচনী বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন করে কার্যনির্বাহী কমিটির কাছ থেকে মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী একজন টানা দুই বারের বেশি নির্বাচন করতে পারবে না। কিন্তু তারা একটি পক্ষকে এ সুযোগ দিয়েছে। এসব পক্ষপাতমূলক আচরণ ও সিদ্ধান্তের কারণে বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনী বোর্ড ও আপিল বোর্ড বাতিল করে নতুন বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
সাবেক সিনিয়র সচিব তপন চন্দ্র বণিকের নেতৃত্বে নতুন করে গঠিত তিন সদস্যের বোর্ডে আছেন সাবেক ডিআইজি মো. শামসুদ্দিন এবং সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী।
আপিল বোর্ডে আছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সাবেক যুগ্ম সচিব আক্তার আহমেদ ও অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম।
পক্ষপাতের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য বাতিল হওয়া বাপার নির্বাচনী বোর্ডের প্রধান এফবিসিসিআই পরিচালক আবু মোতালেব ঢাকা পোস্টকে বলেন, যদি নির্বাচনী বোর্ড পক্ষপাতিত্ব করে বা কোনো অভিযোগ থাকলে তাদের অপসারণ করতে পারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনাল অথবা কোর্ট। সম্প্রতি বাপার সভাপতি এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী পক্ষপাতিত্বের কথা বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নির্বাচনী বোর্ডের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেছিলেন। উনি এখন ভোটার ও প্রার্থী কিছুই না। মন্ত্রণালয় তদন্ত করে উভয় পক্ষের কথা শুনে ১৬ জুন বিকেল ৪টায় বলেছেন নির্বাচন করার জন্য।
তিনি আরও বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাদের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। পরে ওইদিনই তারা সাড়ে ৫টায় তড়িঘড়ি করে কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভা ডেকে নির্বাচনী বোর্ড বাতিল ঘোষণা করেন। এখন একটি খবর পেয়েছি। পরে সাধারণ সদস্যদের একটি চিঠি দিয়েছে নির্বাচন হবে না বলে জানিয়ে। আইন অনুযায়ী নির্বাচন চলাকালীন তারা এটা করতে পারে না।
নির্বাচনী বোর্ড পুরোপুরি স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করছে দাবি করে আবু মোতালেব বলেন, এখন আমরা দেখছি পরবর্তীতে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। তবে নিয়ম অনুযায়ী ১৯ জুন ভোট হওয়ার কথা বলে তিনি জানান।
এসআই/এনএফ