পেঁয়াজের দাম কমছে না, নেই আমদানির উদ্যোগও
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। রান্নাঘরের অতীব জরুরি পণ্যটির দাম এই সময়ের মধ্যে এক পর্যায়ে প্রতিকেজি ১৪০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। এরপর সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা দাম স্বাভাবিক না হলে আমদানির হুঁশিয়ার দেন। এর ২-৩ দিন পর অবশ্য দাম কিছুটা কমে ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে অবস্থান নেয়। এই দাম এখনো স্থির রয়েছে।
তবে, মাত্র তিন সপ্তাহ আগেও প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকায় পাওয়া যেত। সেই হিসেবে বাণিজ্য উপদেষ্টার হুঁশিয়ারির পরও দাম এখনও স্বাভাবিক হয়নি। তা সত্ত্বেও নেই কোনো আমদানির উদ্যোগ।
বিজ্ঞাপন
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী দুই-এক সপ্তাহের মধ্যেই বাজারে দেশি নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়বে। এই মুহূর্তে পার্শ্ববর্তী দেশ থেক পেঁয়াজ আমদানি করা হলে দেশীয় চাষিরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। কেননা, আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম অনেক কম হওয়ায় দেশীয় পেঁয়াজেও বড় দরপতন হবে। এতে উৎপাদন খরচ মেটাতে না পেরে দেশীয় চাষিদের বড় লোকসান হতে পারে। এমনটা হলে দেশীয় চাষিরা পরবর্তীতে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারাবে। তাই, এই মুহূর্তে আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। তবে সরকার বাজার পর্যবেক্ষণ করছে। প্রয়োজন হলে আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে কেজিপ্রতি ৮ রুপিতে (প্রায় ১২ টাকা) নেমেছে। এমন পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের আমদানির অনুমোদন দিলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে। বিপরীতে ক্ষতি হবে দেশের কৃষকের। এ কারণে বাণিজ্য, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ যৌথ কমিটির বৈঠকে আপাতত পেঁয়াজ আমদানি না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে আমদানি করা হবে।
এদিকে আজ শনিবার (২২ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে তিন ধরনের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ছোট সাইজের প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১০০ টাকা, মাঝারি সাইজ ১১০ টাকা এবং এবং বড় সাইজের পেঁয়াজ ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে, বাজারে পাতাযুক্ত নতুন পেঁয়াজ দেখা গেছে। এই পেঁয়াজ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দামে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর পাইকারি আড়তগুলোতে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকা কমলেও খুচরা বাজারে তার প্রভাব নেই৷ পাইকারি আড়তগুলোতে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১০৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও যা ৯৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
কেন পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমূখী
পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির বেশ কিছু কারণ দৃশ্যমান। প্রথমত, উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য। দ্বিতীয়ত, পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভাব। তৃতীয়ত, মৌসুমের শেষ পর্যায় এবং চতুর্থত, বৃষ্টিতে পেঁয়াজের ক্ষতি হওয়া। সাধারণত, প্রতিবছরে নির্দিষ্ট কোনো একটা সময়ে এই কারণগুলোর জন্য পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমূখী দেখা যায়। এ বছর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমদানি বন্ধ থাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিবছর মৌসুম শেষের দিকে এসে পেঁয়াজের দামে বড় উল্লোফন দেখা যায়। বিশেষ করে অক্টোবর-ডিসেম্বরে বাজারে পেঁয়াজের সংকট দেখা যায়। নতুন পেঁয়াজ পুরোপুরি বাজারে না আসা পর্যন্ত অস্থিরতা চলমান থাকে। এই সংকট ব্যবসায়ীরাই কৃত্রিমভাবে তৈরি করেন অনেক ক্ষেত্রে। সরকারের উচিত বছরের শেষ সময়কে টার্গেট করে স্থায়ী একটা সমাধান খোঁজা।
সরকারের পক্ষ থেকে যা বলা হচ্ছে
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, পেঁয়াজের সাম্প্রতিক দরবৃদ্ধির পেছনে কারসাজি রয়েছে। দেশে কৃষিপণ্যটির সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। তবে প্রতিবেশী ভারতে পেঁয়াজের দাম কম থাকায় সীমান্তের স্থলবন্দরগুলোর ওপারে কাছাকাছি প্রচুর ভারতীয় পেঁয়াজ জমা করা হয়েছে। এই পেঁয়াজ আমদানি করে মোটা মুনাফা বাগাতে একটি পক্ষ কৃত্রিমভাবে দাম বাড়াচ্ছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসেই নতুন মৌসুমের ১ লাখ টন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসবে। আগামী মাসে আসবে এ জাতেরই আরও ২ লাখ ৫ হাজার টন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা যা বলছেন
গত ৯ নভেম্বর সচিবালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘চলতি সপ্তাহের মধ্যে বাজারে দাম না কমলে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে দাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে আর অনুমতি দেওয়া হবে না।’
তিনি জানান, ‘পেঁয়াজ আমদানি করতে ইচ্ছুক ২ হাজার ৮০০ জনের আবেদন আছে মন্ত্রণালয়ে। এর ১০ শতাংশকেও যদি পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে বাজারে ধস নামবে। আমরা ধস নামাতে চাই না।’
এমএমএইচ/এমএন