ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকা (এসওপি) এবং স্ক্রো (ESCROW) সার্ভিস চালু হলে কয়েকগুণ এগিয়ে যাবে দেশের ই-কমার্স খাত। এতে ক্রেতা ও উদ্যোক্তা উভয়ই লাভবান হবেন বলে মনে করছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা’ শীর্ষক সভায় ই-কমার্স নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ই-ক্যাব এ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভায় বলা হয়, ইভ্যালিসহ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো এখন থেকে ক্রেতাদের কাছে পণ্য ডেলিভারির আগে টাকা পাবে না। ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছানোর পরই অর্থ পরিশোধ করা হবে। পেমেন্ট সিস্টেমের বিষয়টি তদারকি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ক্যাশ অন ডেলিভারি আগের মতোই থাকবে।

আলাপকালে ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওয়াহেদ তমাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিদ্ধান্তটি দেশের ই-কমার্স খাতের জন্যে খুবই মঙ্গলজনক। এর ফলে কয়েকগুণ এগিয়ে যাবে দেশের ই-কমার্স খাত। আমরা চাই একটা নিয়ম নীতিমালার মধ্যে দেশের উদীয়মান শিল্প ই-কমার্স পরিচালনা হোক। তারই একটা ধাপ এগিয়ে যাওয়া হলো।

তিনি জানান, এর ফলে ছোট হোক আর বড় হোক ই-কমার্স উদ্যোক্তারা কোনো সমস্যায় পড়বেন না। বরং একটা নিয়মের মধ্যে তারা ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন। এতে ক্রেতা ও উদ্যোক্তার মাঝে আস্থাও তৈরি হবে। আমাদের দেয়া এসওপি ও ESCROW সেবা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত দুটি প্রস্তাব সভায় গ্রহণ করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে লাখ লাখ উদ্যোক্তা এবং ক্রেতা আর্থিক অনিশ্চয়তা থেকে রক্ষা পাবে।

ই-ক্যাব জানায়, সভায় তাদের পক্ষ থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ডিজিটাল কমার্স বিষয়ক এসওপি ও স্ক্রো (ESCROW) সেবা বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়া হয়। সংগঠনটির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল। 

এই বিষয়ে ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি ই-কমার্স আইন ও স্ক্রো সেবা চালুর। যেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যে আনা যায়। স্ক্রো সেবা চালুর মাধ্যমে ক্রেতার আর্থিক লেনদেনের নিরাপত্তা দেয়া যায়। সভায় আমরা বিষয়টি আবারও উত্থাপন করেছি। আশা করছি আইনি প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে এসওপি ঘোষণা করা হবে। এবং যত দ্রুত সম্ভব স্ক্রো সেবা যুক্ত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল জানান, ইতিপূর্বে ই-ক্যাব কর্তৃক গঠন করা ই-ভ্যালি সংক্রান্ত পর্যালোচনা কমিটির প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক সভায় তুলে ধরা হয়।

তিনি জানান, ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের খসড়া ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকা ২০২১ বা এসওপি পর্যালোচনা করে এই খাতের উদ্যোক্তা, বিশেষজ্ঞ ও ই-ক্যাবের সদস্যদের মতামত সংযুক্তি ও সমন্বয় করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে ২০ টি বিধিতে সংশোধনী এবং ২৫ টি বিধি নতুন যুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়। এর মধ্যে মার্কেটপ্লেস পণ্য প্রদর্শন, ডেলিভারি, অভিযোগ, রিফান্ড ইত্যাদি বিষয় রয়েছে। ক্রস বর্ডার বিষয়ে আলাদা এসওপি তৈরির প্রস্তাব দেয়া হয়।

স্ক্রো সেবা বলতে এমন একটি সেবার কথা বলা হয়েছে, যাতে অনলাইনে ক্রেতারা অর্ডার করার পর তার দেয়া অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে জমা থাকবে। তাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্রেতার সন্তুষ্টির ভিত্তিতে ই-কমার্স শপকে অর্থ ছাড় দেবে ব্যাংক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্ক্রোর মাধ্যমে ক্রেতার অর্থের নিরাপত্তা বিধান করে।

সভায় ডব্লিওটিও সেল-এর মহাপরিচালক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হাফিজুর রহমান স্টেক হোল্ডার কনসালটেশন ও তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি তুলে ধরেন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা ভোক্তা অধিকার তদারকির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেস্ট সিস্টেম বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার মো. মেজবাউল হক ব্যাংকিং সিস্টেমের মধ্য দিয়ে কীভাবে বিষয়টি তদারকি করা যায় সে ব্যাপারে প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। আইসিটি ডিভিশন থেকে স্ক্রো বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। প্রতিযোগিতা কমিশনের প্রতিনিধি বিভিন্ন অস্বাভাবিক অফারের বিষয়টি তুলে ধরেন এবং এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতিনিধি এ সময় উপস্থিত ছিলেন। 

একে/এইচকে