মোহাম্মদ ট্রেডিং নামের টাইলস বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় ৩৯ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পেয়েছে ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। 

মঙ্গলবার (২৮ জুন) বিষয়টি নিশ্চিত করে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে মিথ্যা তথ্যসহ নানা ধরনের অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে, যা ভ্যাট আইন অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 

তিনি বলেন, ভ্যাট আইনে এ সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভ্যাট আদায়ের আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদনটি ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে পাঠানো হয়েছে।
 
ভ্যাট গোয়েন্দা জানায়, মোহাম্মদ ট্রেডিং নামের প্রতিষ্ঠানটি আরএকে সিরামিকস বাংলাদেশ লিমিটেড এবং স্টার সিরামিক লিমিটেডের কাছ থেকে বিভিন্ন সাইজের (আকার) টাইলস ও স্যানিটারি আইটেম কিনে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করে থাকে। 

প্রতিষ্ঠানটি তাদের ভ্যাটযোগ্য সেবার বিপরীতে প্রযোজ্য রাজস্ব যথাযথভাবে সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে ও সঠিক বিক্রয় তথ্য গোপন করে ঘোষণা বহির্ভূত স্থানে মূসক সংক্রান্ত দলিলাদি সংরক্ষণ করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছিল। 

সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল ২০২০ সালের ৩ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটিতে আকস্মিক অভিযান পরিচালনা করে। এতে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। অভিযানে দেখা যায়, ভ্যাট গোয়েন্দাদের নজর এড়াতে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় থেকে বিভিন্ন দলিল গোপনে ধ্বংস করার জন্য অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়। সংস্থাটির উপপরিচালক তানভীর আহমেদ অভিযানটিতে নেতৃত্ব দেয়। 

পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির আরকে টাওয়ারের প্রধান কার্যালয়ে অভিযানকালে ভ্যাট সংক্রান্ত নথিপত্র ও প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অডিট প্রতিবেদন, দাখিলপত্র (মূসক-১৯) এবং বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জমাকৃত ট্রেজারি চালানের কপি যাচাই করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত বিক্রয়মূল্যের বিপরীতে ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট প্রদান না করে শুধুমাত্র বিক্রয়কৃত পণ্যের মূল্যের বিপরীতে প্রাপ্ত কমিশনের ওপর ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক প্রদান করেছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের নথিপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে বিক্রয় মূল্য ২১ কোটি ২৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯৩৮ টাকা দেখিয়ে এক কোটি ৫৪ হাজার ৬৫৫ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রতিষ্ঠানটির কমিশনসহ মোট ভ্যাটযোগ্য বিক্রয় মূল্য ছিল ৬৩২ কোটি ৩৩ লাখ ৭ লাখ ৯৮২ টাকা এবং এর ওপর প্রযোজ্য ভ্যাটের পরিমাণ ২৮ কোটি ৩৬ লাখ ৭৮ হাজার ৮৭০ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ২৭ কোটি ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ২১৫ টাকা ফাঁকি উদঘাটিত হয়। দুই শতাংশ সুদসহ ১১ কোটি ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার ৬৮২ টাকা বিলম্বজনিত সুদ প্রযোজ্য হবে।

অন্যদিকে তদন্তে প্রতিষ্ঠানটির স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে আরও নয় লাখ ৪৮ হাজার ৫৩২ টাকার ফাঁকি উৎঘাটিত হয়। সব মিলিয়ে ৩৮ কোটি ৯৯ লাখ ৩২ হাজার ৭৫৪ টাকা ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। একই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট গোয়েন্দা ইতোপূর্বে ১২৪ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির ভিন্ন একটি মামলা দায়ের করেছিল যা বর্তমানে বিচারিক প্রক্রিয়ায় চলমান রয়েছে বলেও জানিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। 

আরএম/আরএইচ