চলতি বছরের ঈদুল আজহায় গরু বিক্রি নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তার মধ্যে সময় পার করছেন খামারি জাহিদুল ইসলাম। এমন সময় ডিজিটাল হাটের কথা শুনে করোনা মহামারিকালে এ হাটেই গরু বিক্রির পরিকল্পনা করেন অনেকে।

খোঁজ নিতেই হতাশা নিয়ে ফেরেন স্বল্পশিক্ষিত খামারি জাহিদুল ইসলাম। ডিজিটাল হাটে গরু বিক্রির শর্ত পূরণের যোগ্যতা নাই তার। এ হাটে যে কেউ গরু বিক্রি করতে পারবেন না। বিক্রেতা হিসেবে নিবন্ধন করতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশ ই-কমার্স অব অ্যাসোসিয়েশন অথবা বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হতে হবে।

শুধু জাহিদুল ইসলাম নন তার মতো হাজার হাজার তৃণমূল খামারিদের মধ্যে ডিজিটাল হাট আশা জাগালেও পরক্ষণেই হতাশায় ডুবিয়েছে এমন নির্দেশনা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কোরবানির হাট নিয়ে এমন নির্দেশনায় তৃণমূল খামারিরা উপেক্ষিত-ই থেকে যাচ্ছেন।

আলাপকালে জাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিচিতদের কাছ থেকে ডিজিটাল কোরবানির হাটের তথ্য পাই। এরপর খোঁজ নিতেই দেখি শর্ত রয়েছে। তখন মনটা খারাপ হয়ে যায়।

চার মন্ত্রী, এক প্রতিমন্ত্রী, সিটি মেয়র, একাধিক সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উপস্থিতিতে ঢাকঢোল পিটিয়ে ডিজিটাল কোরবানির হাট উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ওই অনুষ্ঠানে তৃণমূল খামারিদের প্রসঙ্গে কেউ কোনো সুস্পষ্ট সুখবর দেন নাই।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশিকায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ডিজিটাল হাটে পশু বিক্রির জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই অবশ্যই ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অথবা বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হতে হবে।

নির্দেশিকায় বলা আছে, আবেদনকারীদের মধ্য থেকে শুধুমাত্র নির্বাচিতরাই ডিজিটাল হাট এ বিক্রয়ের জন্য নিবন্ধিত হবেন। বিক্রেতা নির্বাচনের জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দায়িত্ব পালন করবে। অবশ্যই বিক্রেতার ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। এবং বিক্রোকে ভেন্ডর রেজিস্ট্রেশনের সময় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য পেশ করতে হবে।

এমন সব নির্দেশিকা থাকলেও যারা সদস্য নন সেসব খামারিরা কীভাবে এ হাটে যুক্ত হতে পারেন সে বিষয়ে তেমন কোনো সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোন শ্রেণির খামারিরা এ হাটে অংশ নিতে পারবেন তার তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যারা সদস্য নন তারা কীভাবে এখানে যুক্ত হতে পারেন অথবা অনলাইনে পশু বিক্রি করতে পারেন তার একটা সুস্পষ্ট তথ্য থাকা দরকার ছিল। যেহেতু এখানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুক্ত রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতেই চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিওটিও সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সব ধরনের খামারিরাই এ হাটে অংশ নিতে পারবেন। তবে যারা ইক্যাব ও অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য নন তারা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আবেদন করে এ হাটে অন্তর্ভূক্ত হতে পারবেন।

খামারিদের কথা চিন্তা করেই এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ক্রেতা ও বিক্রেতার নিরাপত্তার বিষয়টা সবার আগে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ওই দুই সংগঠনের বাইরে অর্থাৎ যারা সদস্য নন সেসব খামারি তাদের স্থানীয় প্রশাসন বা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নিবন্ধিত হতে পারবেন।

সূত্র জানায়, বর্তমানে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা ১৪ হাজারের মতো। আর ই-ক্যাবের সদস্য সংখ্যাও খুব বেশি আহামরি নয়। অথচ এ বছর প্রায় সাত লাখ খামারি কোরবানির পশু প্রস্তুত করেছেন।

ই-ক্যাবের প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার বলেন, এই হাটটি ঈদকেন্দ্রিক। এবার করোনা মহামারির প্রকোপও বেড়েছে। তাই আমরা চাই ক্রেতারা অনলাইন থেকে নিরাপদে পশু ক্রয় করুক। গতবার প্রান্তিক চাষিদের সরাসরি যুক্ত থাকার সুযোগ থাকলেও এবার সেই সুযোগ নেই। কেননা যাচাই-বাছাই করা কঠিন হবে। তাই আমরা শুধু ভেরিফায়েড বিক্রেতাদের সুযোগ দিচ্ছি।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শাহ এমরান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের বাইরের কেউ যদি এ প্লাটফর্মে পশু বিক্রি করতে চান তাহলে তাদের আমাদের সঙ্গে যোগোযোগ করতে হবে। আমরা তাদের যে কোনো সময় সদস্য করতে পারি। সুতারাং সাধারণ খামারিদের হতাশ না হয়ে আপনার উপজেলার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সব কাজ সম্পাদন করেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের খামার শাখা সূত্র জানায়, সারাদেশে এ বছর কোরবানিযোগ্য এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি পশু প্রস্তুত হচ্ছে। গত বছর প্রস্তুত ছিল এক কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০টি পশু। আর কোরবানি হওয়া পশুর সংখ্যা ছিল ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৩টি। অবশ্য আগের বছরগুলোতে কোটিরও বেশি পশু জবাই হয়েছে।

সূত্র জানায়, কোরবানিযোগ্য এসব পশু প্রস্তুত করছেন দেশের ছয় লাখ ৯৮ হাজার ১১৫ জনের মতো খামারি। খামারির সংখ্যার দিকে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে রংপুর বিভাগ। এ বিভাগে খামারির সংখ্যা দুই লাখ ২২ হাজার ৪১৮। পরের স্থানে রয়েছে রাজশাহী। এ বিভাগে খামারির সংখ্যা এক লাখ ২৭ হাজার ২৬১।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে এবারের ডিজিটাল হাট বাস্তবায়ন করছে ই-ক্যাব এবং বিডিএফএ। সহযোগিতায় রয়েছে বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল, এটুআই-একশপ। চলতি বছরে এ হাটে পশু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ।

অনলাইনের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয় হাটটি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

একে/এসএম