করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৪ দিন সব ধরনের শিল্প-কারখানা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। সরকারের এই নির্দেশনায় রফতানিমুখী শিল্পকারখানা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাই তারা ঈদের পর সরকার ঘোষিত লকডাউনে পোশাক খাত খোলা রাখতে সর্বাত্মক তদবির চালাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা সরকারকে বুঝাতে চাচ্ছেন, করোনা প্রতিরোধে শিল্পকারখানা খোলা রাখলে সরকার বেশি উপকৃত হবে। কারণ করোনার সময় শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলেন। আর শ্রমিকরা যখনই কারখানার বাইরে চলে যান, তখন স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করেন। ফলে ঈদের পর শ্রমিকরা বাড়িতে চলে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করবেন। তাতে করোনা বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে।

অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার কারণে গত এক-দেড় বছর পর বায়ারদের ক্রয়াদেশ আসতে শুরু করেছে। ফলে রফতানিমুখী এই খাত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এ মুহূর্তে কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন ক্রেতার কাছ থেকে ক্রয়াদেশ হাতছাড়া হয়ে যাবে।

তাই ঈদের পর সরকার ঘোষিত লকডাউনে শিল্পকারখানা খাতকে এর বাইরে রাখতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তদবির চালাচ্ছেন তারা। সর্বশেষ পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর পাশে দাঁড়িয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে টেরিটাওয়েল, অ্যাকসেসরিজ অ্যাসোসিয়েশনসহ রফতানিমুখী খাতের সংগঠনগুলোর। 

তারা বুধবার রাতে বিজিএমইএর গুলশান অফিসে জরুরি বৈঠক করেছেন। যে করেই হোক লকডাউনে রফতানীমুখী কারখানা খোলা রাখতে চায় ব্যবসায়ী নেতারা।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রস্তাব উপস্থাপন করবে রফতানিমুখী শিল্প মালিকরা। দুপুর ৩টায় মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে থাকবেন সংগঠনটির সাবেক নেতারাও।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার প্রকোপ রোধে শ্রমিকদের বাঁচাতে হলে কারখানা খোলা রাখতে হবে। তারা কাজে থাকলে অযথা ঘোরাফেরা করবেন না। ফলে তারা করোনা থেকে মুক্ত থাকবেন।

তিনি বলেন, আমরা সরকারকে এ কথাই বুঝাতে চেষ্টা করছি। সব দিক দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করছি দেখি কী হয়।    

এ বিষয়ে বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মাদ হাতেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদের পর কঠোর লকডাউনের মধ্যে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানাগুলো চালু রাখতে চাই। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি।

তিনি বলেন, এখন বায়ারদের যে অর্ডার রয়েছে, সেগুলো যদি সময়মত শিপমেন্ট করা না হয় তাহলে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাছাড়া এসব পণ্য আকাশপথে পাঠাতে হবে, যা প্রচুর ব্যয়বহুল। এ অবস্থায় ঈদের পর দীর্ঘদিন ছুটি থাকলে ক্রয়াদেশগুলো হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। তাই লকডাউনের মধ্যেও কারখানা চালু রাখার বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কাছে সুপারিশ করব।

উল্লেখ্য, বুধবার (১৪ জুলাই) রাতে সভায় ব্যবসায়ীরা জানান, লকডাউনে রফতানীমুখী খাত বন্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলে অনেক কারখানা দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। ইউরোপের বাজার এখন পুরোপুরি সচল। দ্বিতীয় প্রান্তিকে খুচরা বিক্রেতাদের বিক্রয় প্রবৃদ্ধি ব্র্যান্ডভেদে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। পণ্য পাঠাতে একদিন দেরি হলে পশ্চিমা ক্রেতারা আকাশপথে পণ্য পরিবহনের কথা বলেন। বন্ধের সময় যে ক্রয়াদেশগুলো জাহাজীকরণের কথা ছিল, সেগুলোর সবই হয় আকাশপথে পাঠাতে হবে, নয় বাতিল হয়ে যাবে। একবার ডেলিভারি নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে পাইপলাইনে থাকা সব ক্রয়াদেশের ওপরই তার প্রভাব পড়বে। সার্বিকভাবে চিন্তা করলে মারাত্মক ভঙ্গুর যে পরিস্থিতি থেকে তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন, সেটি আর ধরে রাখা যাবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

এমআই/ওএফ