টানা ১২ দিন ছুটির পর রোববার (১ আগস্ট) রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানাসহ সব কারখানা চালু হয়েছে। এদিন কারখানাগুলোতে ৮৫ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ শ্রমিক উপস্থিত হয়েছে বলে মনে করছে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও নিটওয়্যার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ।

গত মাসের ১৯ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ঈদ ও করোনাভাইরাসের প্রকোপ রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের কারণে টানা ১২ দিন দেশের সব কল-কারখানা বন্ধ ছিল। সরকারের ঘোষণা ছিল ৫ আগস্ট পর্যন্ত সব কারখানা বন্ধ থাকবে। 

কিন্তু করোনার এই প্রকোপের সময় হঠাৎ করে গত ৩০ জুলাই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ৫ আগস্টের পরিবর্তে রফতানিমুখী শিল্প-কারখানাকে ১ আগস্ট থেকে চালু করার সুযোগ দিয়েছে সরকার। আর তাতে ঈদে গ্রামে ফেরা শ্রমিকরা বড় সমস্যার মধ্যে পড়েন। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পায়ে হেঁটে, ভ্যানে চড়ে, আবার কখনও ট্রাক ও বাসে করে নানা ভোগান্তির মধ্য দিয়ে চাকরি হারানোর ভয়ে কর্মস্থলে ফিরেছেন তারা।

এ বিষয়ে বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথমদিন বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত পোশাক কারখানায় ৯০ শতাংশ শ্রমিক উপস্থিত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তারা কাজ শুরু করেছেন। 

তিনি বলেন, প্রতিটি কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকদের কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি, তদারকি করছি কারখানাগুলোতে যাতে কোনোভাবেই করোনায় আক্রান্ত না হয়।

প্রায় একই কথা বলে সংগঠনটির ভাইস-প্রেসিডেন্ট শহিদুল্লাহ আজীম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পোশাক খাতের গড়ে ৯২ শতাংশ শ্রমিক কারখানায় হাজির হয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫-৯০ শতাংশ শ্রমিকই কারখানার আশপাশের এলাকায় বসবাস করেন। 

তিনি বলেন, শ্রমিকরা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, সঠিকভাবে মাস্ক পরেন, সেজন্য বিজিএমইএর পক্ষ ১৫টির বেশি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা কারখানাগুলোর পরিদর্শন করছেন। বিষয়গুলো দেখছেন।

নিটওয়্যার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএর পরিচালক ফজলে এহসান শামীম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কিছু কারখানায় ৮২ ভাগ শ্রমিক এসেছেন। আবার কিছু কারখানায় ৯২ শতাংশ শ্রমিক আজ কাজ করেছেন। সব মিলে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ শ্রমিক আমাদের কারখানাগুলো কাজ করেছে। 

নাম না প্রকাশের শর্তে গাজীপুরে স্পারল এপারেল গার্মেন্টসের এক কর্মকর্তা জানান, তাদের কারখানায় ৩ হাজার ৮৩২ জন শ্রমিক রয়েছেন। তার মধ্যে প্রথম দিন ৩ হাজার ৫১৮ জন কাজ করছেন। অর্থাৎ ৩১৪ জন অনুপস্থিত। সেই হিসেবে ৯২ শতাংশ শ্রমিক উপস্থিত রয়েছেন।   

এর আগের বিজিএমইএ ও বিকেএমইর পক্ষ থেকে বলা হয়, ১ আগস্ট দেশের সব রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা চালু হচ্ছে। এই বিধিনিষেধের কারণে বেশিরভাগ শ্রমিক এখনও তাদের গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন। সব শ্রমিকের পক্ষে তাই রোববার কাজে যোগ দেওয়া সম্ভব হবে না। ফলে কারখানার আশপাশে থাকা শ্রমিকদের দিয়ে কারখানা চালু করা হবে।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন, আশপাশে বসবাসকারী শ্রমিকদের দিয়েই রোববার রফতানিমুখী শিল্প-কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম চালু করা হবে। এ সময়ের মধ্যে যেসব শ্রমিক কাজে যোগ দিতে পারবেন না তাদের চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হবে না। কঠোর বিধিনিষেধ শেষ হলে পর্যায়ক্রমে ঈদের ছুটিতে গ্রামে যাওয়া শ্রমিকরা কারখানার কাজে যোগ দেবেন।

নিটওয়্যার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আশপাশের এলাকায় বসবাসকারী শ্রমিকদের দিয়ে আপাতত রোববার (১ আগস্ট) থেকে কারখানা চালু করা হবে। কারখানা খোলা হলেই বোঝা যাবে কত শ্রমিক এখনও কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারেননি। 

তিনি বলেন, এখন কাজের প্রচুর চাপ, আমাদের উৎপাদন দরকার। সুতরাং কারখানা চালু করাটাই আমাদের লক্ষ্য।

এমআই/এইচকে