করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার প্রণোদনার ঋণ ঘোষণা করে। এখান থেকে ছোট ও বড় ব্যবসায়ীরা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন। এ ঋণের মোট সুদের অর্ধেক ভর্তুকি হিসাবে দিয়েছে সরকার। জনগণের করের টাকায় ভর্তুকি দেওয়া সুদের ঋণ কারা পেয়েছেন এবং কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে— তা জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

রোববার (১ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রণোদনার ঋণের বিষয়ে ব্যাংকগুলোর কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো তথ্য পাঠালে তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রণোদনার ঋণের টাকা কারা নিয়েছে এবং কোথায় ব্যবহার হয়েছে— বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য ভর্তুকির সুদে প্রণোদনার ঋণ দিয়েছে সরকার। ব্যাংকগুলো সুদ ভর্তুকির টাকা ইতোমধ্যে বিতরণ করেছে। এখন আসলে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক ঋণ পেয়েছেন কি না বা ঋণের টাকা কোথায় ব্যবহার হয়েছে—বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সম্প্রতি প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ অন্য খাতে ব্যবহার হচ্ছে— এমন আশঙ্কার কথা জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়। গত ২৫ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সবগুলো ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে প্রণোদনা ঋণ অনুৎপাদনশীল খাতে যাতে ব্যবহার না হয় সে বিষয়ে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে বলা হয় ব্যাংকগুলোকে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও প্রণোদনার ঋণ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান

অভিযোগ রয়েছে, মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য এ ঋণ দেওয়া হলেও তা অন্য খাতে ব্যবহার হচ্ছে। অনেকে ঋণ নিয়ে পুরোনো ঋণ পরিশোধ করছে। কেউ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে। আবার কেউ কেউ নতুন কারখানা কিনেছেন।

এদিকে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের চলতি মূলধন জোগান দেওয়ার জন্য চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ। এর মধ্যে সাড়ে ৪ শতাংশ দেবেন গ্রাহক। বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ সুদ ভর্তুকি দেবে সরকার।

সবমিলিয়ে গত বছর ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে চাঙা করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। এসব প্যাকেজের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল ব্যাংকঋণ নির্ভর

শিল্প ও সেবা খাতের যেসব প্রতিষ্ঠান (এসএমই ব্যতীত) করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, শুধু সেসব প্রতিষ্ঠান এ প্যাকেজের আওতায় সুবিধা পাবে। এ প্যাকেজের আওতায় সীমাতিরিক্ত চাহিদার বিপরীতে ঋণদানের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত অধিকসংখ্যক প্রতিষ্ঠান যাতে এ প্যাকেজের আওতায় ঋণসুবিধা ভোগ করতে পারে, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

প্যাকেজের আওতায় চলতি অর্থবছরের জন্য প্রদত্ত ঋণ স্বল্পসংখ্যক গ্রাহকের মধ্যে কেন্দ্রীভূত না করে ক্ষতিগ্রস্ত অধিকসংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে এ সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য শিল্প ও সেবা খাতের ক্ষতিগ্রস্ত যেসব প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত সুবিধা পায়নি, তাদের অগ্রাধিকার দিতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়

জানা গেছে, করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় দ্বিতীয় দফায় প্রণোদনা ঋণ বিতরণ হবে ৫৩ হাজার কোটি টাকার। এ ঋণ বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে। কোন ব্যাংক কত টাকা ঋণ দিতে পারবে, তাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এছাড়া কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের জন্য এবারও বরাদ্দ রয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। এ ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ। এর মধ্যে ৫ শতাংশ ভর্তুকি দেবে সরকার, বাকিটা গ্রাহক দেবেন।

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি স্বাভাবিক রাখতে গত বছরের এপ্রিলে কম সুদে প্রণোদনা ঋণ বিতরণ শুরু হয়। প্রথম দফার ঋণ বিতরণ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এর আওতায় ব্যাংকগুলো ছোট ও বড় উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে চলতি মূলধন হিসেবে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

গত বছরের এপ্রিলে বৃহৎ সেবা ও শিল্প খাতের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল সুবিধা দেওয়া কথা ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তবে একই সময়ে চালু হওয়া রফতানি খাতের পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়ায় বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের প্যাকেজ থেকে এ খাতে ঋণ দেওয়া হয়। এ কারণে বৃহৎ শিল্পের প্যাকেজের আকার প্রথমে ৩৩ হাজার কোটি টাকা এবং পরে তা বাড়িয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা করা হয়।

করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় দ্বিতীয় দফায় প্রণোদনা ঋণ বিতরণ হবে ৫৩ হাজার কোটি টাকার। এ ঋণ বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে। কোন ব্যাংক কত টাকা ঋণ দিতে পারবে, তাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

সবমিলিয়ে গত বছর ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে চাঙা করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। এসব প্যাকেজের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল ব্যাংকঋণ নির্ভর।

তবে সম্প্রতি প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ অন্য খাতে ব্যবহার হচ্ছে— এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়। গত ২৫ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সবগুলো ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে প্রণোদনা ঋণ অনুৎপাদনশীল খাতে যাতে ব্যবহার না হয় সে বিষয়ে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে বলা হয় ব্যাংকগুলোকে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও প্রণোদনার ঋণ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান।  

এসআই/এমএআর/