৩ দিনেই বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ফিরেছে আরও ১০ হাজার কোটি টাকা
করোনাভাইরাসের প্রকোপ রোধে সাপ্তাহিক ছুটির পাশাপাশি ১ আগস্ট ও ৪ আগস্ট দুদিন ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের লেনদেন বন্ধ ছিল। ফলে ২ আগস্ট থেকে ৫ আগস্ট মোট ৩ কার্যদিবস দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে।
লেনদেন হওয়া তিন দিনেই সূচক ও বেশিরভাগ শেয়ারের দাম বেড়েছে। তাতে লেনদেন, সূচক এবং বাজার মূলধন তিনটিরই নতুন রেকর্ড গড়েছে দেশের পুঁজিবাজার।
বিজ্ঞাপন
আলোচিত সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৭০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৫৯৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। যা সূচকটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে। এই সূচকের পাশাপাশি ডিএসইর অপর দুই সূচক ডিএসইএস সূচক ৩৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৩৯ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক ৫৮ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৩৮৫ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে। এই দুটি সূচকও ইতিহাসের সেরা স্থানে অবস্থান করছে।
বেশির ভাগ শেয়ার ও সূচক বাড়ায় নতুন করে গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ফিরেছে ৯ হাজার ৯২১ কোটি ৩০ লাখ ৬৭ হাজার ৩০২ টাকা। শুধু তাই নয়, বাজার মূলধনের অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এখন ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৩২৬ কোটি ১০ লাখ ৯৪ হাজার ৯৭২ টাকায় অবস্থান করছে। এর আগের পুরো জুলাই মাসে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ফিরেছে ২০ হাজার কোটি টাকা।
বিজ্ঞাপন
অপরদিকে, প্রায় দুই মাস ধরে দুই হাজার কোটি টাকার নিচে লেনদেন হওয়া ডিএসইর লেনদেন এখন আড়াই হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। এই অবস্থা ছিল চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জও।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এখন সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিৎ মন্দ অর্থাৎ দুর্বল মৌলভিত্তিক কোম্পানির শেয়ারের দাম যাতে না বাড়ে সেদিকে নজর রাখা। এগুলো যাতে বাজারকে প্রভাবিত না করতে পারে সেজন্যই খেয়াল রাখতে হবে।
বাজারে সার্বিক বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুঁজিবাজারে সূচক বাড়কে-কমবে এটা স্বাভাবিক চিত্র। কিন্তু ভালো কোম্পানির চেয়ে যখন দুর্বল মৌলভিত্তি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ে, এটা ভালো না। সম্প্রতি এ ধরনের কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে, যা পুঁজিবাজারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিএসইসিকে বিষয়টি দেখতে হবে। আইনের আওতায় এনে এদের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুঁজিবাজার এখন ভালো অবস্থায় রয়েছে। এই বাজারে যাতে কেউ যেন কারসাজি না করে সেই বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা পুঁজিবাজারে এই স্থিতিশীল গ্রোথ ধরে রাখতে চাই।
বাজার পর্যালোচনা : বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে তিন দিনে মোট সাত হাজার ১৩কোটি ৯৯ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৬ টাকা লেনদেন হয়েছে। এর আগের সপ্তাহে মোট পাঁচ কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল সাত হাজার ১২৮কোটি ৬৭ লাখ ৫ হাজার ৬৬৫ টাকা। অর্থাৎ, আগের সপ্তাহের চেয়ে লেনদেন কিছুটা কমেছে। তবে গড় লেনদেন বেড়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। তার আগের সপ্তাহের গড় লেনদেন ছিল ১ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ, গড় লেনদেন বেড়েছে ৯শ কোটি টাকা।
এই সময়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৮১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মধ্যে দাম বেড়েছে ২৮৩টির, কমেছে ৮৩টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১১টির। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হওয়া ৩৮১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছিল ১৯৯টি, কমেছিল ১৬৭টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।
বেশির ভাগ শেয়ারের দাম বাড়ায় সূচকের বাজার মূলধন ৯ হাজার ৯২১ কোটি ৩০ লাখ ৬৭ হাজার ৩০২টাকা বেড়ে ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৩২৬ কোটি ১০ লাখ ৯৪ হাজার ৯৭২ টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা এর আগের সপ্তাহের ছিল ৩৪ হাজার ৪০৪ কোটি ৮০ লাখ ২৭ হাজার ৬৭০ টাকা।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) তিন কার্যদিবসে মোট ২৪৩ কোটি ৩০ লাখ ৫২ হাজার ৪৭৫ টাকা লেনদেন হয়েছে। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ২৬৯টির, কমেছে ৫৯টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টি কোম্পানির শেয়ারের। বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায় সিএসইর প্রধান সূচক সিএসইএক্স আগের সপ্তাহের চেয়ে ৫৫৩ পয়েন্ট বেড়ে ১৯ হাজার ১৮৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এমআই/এইচকে