বিদায়ী ২০১৯- ২০ অর্থবছরে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট জরিপ চালিয়েছে ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। জরিপে খুব কম সংখ্যক দোকানে ভ্যাট নিবন্ধন মিলেছে।

ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সংস্থাটি মোট ২৫টি মার্কেটে অবস্থিত ১৫ হাজার ৪৮২টি দোকানে জরিপ পরিচালনা করে। এর মধ্যে চলতি বছরের ২৪ থেকে ৩১ মে এক সপ্তাহে ১৭টি মার্কেট জরিপ পরিচালিত হয়। সেখানে মোট ১ হাজার ৯৭৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নিবন্ধন পাওয়া যায় মাত্র ৫১৬টির। বাকি ১ হাজার ৪৫৮টি ব্যবসার কোনো ভ্যাট নিবন্ধন নেই। অর্থাৎ অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের হার প্রায় ৭৭.৩৬ শতাংশ।

অন্যদিকে নিবন্ধিত ব্যবসার হার ২২.৬৪ শতাংশ। জরিপ অনুযায়ী মে মাসে ৫ হাজার টাকার উপরে ভ্যাট প্রদান করেছে মাত্র ১১৩টি। বাকি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নিয়েছে, তবে তারা নামমাত্র ভ্যাট প্রদান করে।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগ থেকে বিভিন্ন মার্কেটে খুচরা পর্যায়ে বিশেষ জরিপ পরিচালনা করা হয়। এ সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিশেষ নির্দেশে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সর্বমোট ২৫টি মার্কেটে অবস্থিত ১৫ হাজার ৪৮২ টি দোকানে জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে দেখা যায়, নতুন আইন অনুযায়ী ১৩ ডিজিটের ভ্যাট নিবন্ধনের সংখ্যা খুবই কম।

তবে কত শতাংশ দোকান ভ্যাটের বাইরে রয়েছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দিতে চাননি তিনি।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, জরিপ চলাকালীন মার্কেটে অবস্থিত দোকানের মালিক এবং মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা এবং তাদের আইন পরিপালনে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। চলতি বছরে এ সংক্রান্তে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে আরও বেশকিছু আলোচনা সভার আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।

এদিকে এনবিআরের ভ্যাট অনলাইন সূত্রে জানা যায়, ভ্যাট গোয়েন্দাদের  জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার পর মাঠ পর্যায়ে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণের হার মাসে প্রায় ৪ গুণ বেড়েছে। যার ইতিবাচক প্রভাব চলতি অর্থবছরে রাজস্ব খাতে লক্ষ্য করা যাবে বলে এনবিআর মনে করছে।

বিদায়ী অর্থ বছরে ভ্যাট গোয়েন্দা রাজধানীর বিপণি বিতানগুলোর মধ্যে বাড্ডার সুবাস্তু নজর ভ্যালি, বারিধারা ডিওএইচএসের অনন্যা শপিং সেন্টার, গুলশানের নাভানা টাওয়ার, উত্তরার আরএকে শপিং কমপ্লেক্স, ট্রপিক্যাল আলাউদ্দিন টাওয়ার, ধানমন্ডির সানরাইজ প্লাজা, অরচার্ড পয়েন্ট, মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ার; সাভারের সিটি সেন্টার, সাভার নিউমার্কেট; নারায়ণগঞ্জের মার্ক টাওয়ার, সায়েম প্লাজা, সমবায় নিউমার্কেট, আল হাকিম সেন্টার, ডেমরার হাজী হোসেন প্লাজা; নরসিংদীর ইনডেক্স প্লাজা ও জামান শপিং কমপ্লেক্সে জরিপ কাজ পরিচালনা করে। এছাড়া সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীসহ আশে-পাশের এলাকায় জরিপ কাজ চালিয়েছে ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।

এছাড়া ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ২৩৩টি প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটিত করে ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা। এগুলোর মধ্যে ১৪১টি প্রতিষ্ঠানে অডিট করে এবং ৯২টি প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অভিযান চালিয়ে ওই ফাঁকি উদঘাটন করে সংস্থাটি। যদিও নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন শুরুর মধ্যেই করোনার বিস্তারের কারণে বড় ধরনের অভিযানে নামেনি ভ্যাট গোয়েন্দা। পরবর্তীতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ধীরে ধীরে চালু হওয়ায় এনবিআরের নির্দেশে ভ্যাট ফাঁকি রোধে মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করে ভ্যাট গোয়েন্দা। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণও মিলে যায়।

আরএম/এমএইচএস